Dhaka শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাগপা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দলে থাকতে পারেননি। তাকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। আ স ম আব্দুর রব, প্রয়াত শাহজাহান সিরাজ, প্রয়াত ওবায়দুর রহমান, প্রয়াত শাহ মোয়াজ্জেম,প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, মাহমুদুর রহমান মান্না সবাই বেরিয়ে গেছেন। কারণ, ওই সময় তারা দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এখনকার আওয়ামী লীগ আরও বেশি খারাপ। তাদের বডি কেমিস্ট্রি হলো কাউকে সহ্য করতে পারে না। দুর্নীতি, চুরি তাদের বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে যারা ছাত্রলীগ করতেন, তারা বাধ্য হয়েছেন বের হয়ে আসতে। কারণ আওয়ামী লীগে যারা ছিলেন, তারা ছিলেন সম্পূর্ণ দুর্নীতিপরায়ণ, গণবিরোধী, জনগণের বিরুদ্ধে তারা অবস্থা নিচ্ছিল।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এই সরকার আর এক মুহূর্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে, দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে। তারা জুডিশিয়ারি ও ইলেকশন কমিশন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে, যাতে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি না হয়। সেজন্য ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ তৈরি করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।

আওয়ামী লীগকে ওয়াদা ভঙ্গকারী দল আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেনে, নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে দাবি পূরণ করে দেবে না। বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অবশ্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। না হলে কারও অস্তিত্ব থাকবে না।

আজকে জনগণ ও সরকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য যখন মানুষ মরছে, যখন আন্দোলনের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে, যখন দেশের মানুষ প্রায় ঐক্যবদ্ধ, সেই সময় এই সরকার চেষ্টা করছে কী করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, র‌্যাব, আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের দিয়ে বেআইনিভাবে সেই আন্দোলনকে নস্যাৎ ও দমন করা যায়।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আজকে আমরা এমন একটি সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি, যে সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ সরকার কাউকে দিচ্ছে না। কারণ এই সরকার ইতোমধ্যে নিজের মাথাটি বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা একটি ক্রান্তিকালে এসে পৌঁছেছি। এই সময়ে নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে, নাকি দীর্ঘকালের জন্য একটি ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। একদিকে বাংলাদেশের মানুষ, আরেক দিকে একটি শাসক গোষ্ঠী। যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়, বেআইনিভাবে ব্যবহার করে জনগণকে অত্যাচার নির্যাতন করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা নানা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। মিডিয়া আজ কথা বলতে পারে না। এটা দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না। সবাই মিলে যদি প্রতিবাদ না করে, তাহলে দেশ রক্ষা হবে না। আমাদের অধিকার নিশ্চিত হবে না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কয়দিন আগে আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। তার মানে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে। আজকে আবার পত্রিকায় বড় করে এসেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন অব ডিফল্ড লোনস। খেলাপি ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। আগে শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন ছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতি খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমরা শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দেবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।

নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। সরকার দেশের জনগণকে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এখন সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ কি গণতান্ত্রিক হবে নাকি পরনির্ভরশীল ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হবে? একদিকে একটি শাসকগোষ্ঠী ও অন্যদিকে জনগণ। দেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সরকার। তারা অন্যায়ভাব র‌্যাব, পুলিশ ও দলীয় গুন্ডা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমাতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ তারা নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতগুলো মিডিয়া আছে কিন্তু স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। অসংখ্য সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দিনকাল বন্ধ করেছে। সাগর-রুনি দম্পতির চার্জশিট দিতে পারেনি। কেউ কথা বলতে পারে না চাকরির ভয়ে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে কোনো কিছুই থাকবে না। এই হলো আওয়ামী লীগ। যারা বাকশাল করেছিল। তারা আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমাদের হাইকোর্ট জামিন দিলে নিম্ন আদালতে তা বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যেন তৈরি না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

দেশের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শফিউল আলম প্রধান একটি সাম্য ও মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু আজও সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ এই সরকার দিচ্ছে না। কারণ, তারা তাদের মাথা বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। তারা অন্যায়ভাবে র্যা ব, পুলিশ ও দলীয় গুণ্ডা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমাতে চায়।

শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শফিউল আলম প্রধান কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন, তারা জানেন, শফিউল আলম প্রধান একজন ত্যাগী, দেশপ্রেমিক, বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তিনি পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তিনি নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, এনপিপির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, নবীউল্লাহ নবী চৌধুরী, তাঁতি দলের কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি : ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৪:১৭:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাগপা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দলে থাকতে পারেননি। তাকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। আ স ম আব্দুর রব, প্রয়াত শাহজাহান সিরাজ, প্রয়াত ওবায়দুর রহমান, প্রয়াত শাহ মোয়াজ্জেম,প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, মাহমুদুর রহমান মান্না সবাই বেরিয়ে গেছেন। কারণ, ওই সময় তারা দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এখনকার আওয়ামী লীগ আরও বেশি খারাপ। তাদের বডি কেমিস্ট্রি হলো কাউকে সহ্য করতে পারে না। দুর্নীতি, চুরি তাদের বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে যারা ছাত্রলীগ করতেন, তারা বাধ্য হয়েছেন বের হয়ে আসতে। কারণ আওয়ামী লীগে যারা ছিলেন, তারা ছিলেন সম্পূর্ণ দুর্নীতিপরায়ণ, গণবিরোধী, জনগণের বিরুদ্ধে তারা অবস্থা নিচ্ছিল।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এই সরকার আর এক মুহূর্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে, দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে। তারা জুডিশিয়ারি ও ইলেকশন কমিশন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে, যাতে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি না হয়। সেজন্য ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ তৈরি করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।

আওয়ামী লীগকে ওয়াদা ভঙ্গকারী দল আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেনে, নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে দাবি পূরণ করে দেবে না। বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অবশ্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। না হলে কারও অস্তিত্ব থাকবে না।

আজকে জনগণ ও সরকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য যখন মানুষ মরছে, যখন আন্দোলনের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে, যখন দেশের মানুষ প্রায় ঐক্যবদ্ধ, সেই সময় এই সরকার চেষ্টা করছে কী করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, র‌্যাব, আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের দিয়ে বেআইনিভাবে সেই আন্দোলনকে নস্যাৎ ও দমন করা যায়।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আজকে আমরা এমন একটি সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি, যে সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ সরকার কাউকে দিচ্ছে না। কারণ এই সরকার ইতোমধ্যে নিজের মাথাটি বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা একটি ক্রান্তিকালে এসে পৌঁছেছি। এই সময়ে নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে, নাকি দীর্ঘকালের জন্য একটি ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। একদিকে বাংলাদেশের মানুষ, আরেক দিকে একটি শাসক গোষ্ঠী। যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়, বেআইনিভাবে ব্যবহার করে জনগণকে অত্যাচার নির্যাতন করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা নানা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। মিডিয়া আজ কথা বলতে পারে না। এটা দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না। সবাই মিলে যদি প্রতিবাদ না করে, তাহলে দেশ রক্ষা হবে না। আমাদের অধিকার নিশ্চিত হবে না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কয়দিন আগে আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। তার মানে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে। আজকে আবার পত্রিকায় বড় করে এসেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন অব ডিফল্ড লোনস। খেলাপি ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। আগে শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন ছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতি খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমরা শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দেবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।

নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। সরকার দেশের জনগণকে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এখন সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ কি গণতান্ত্রিক হবে নাকি পরনির্ভরশীল ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হবে? একদিকে একটি শাসকগোষ্ঠী ও অন্যদিকে জনগণ। দেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সরকার। তারা অন্যায়ভাব র‌্যাব, পুলিশ ও দলীয় গুন্ডা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমাতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ তারা নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতগুলো মিডিয়া আছে কিন্তু স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। অসংখ্য সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দিনকাল বন্ধ করেছে। সাগর-রুনি দম্পতির চার্জশিট দিতে পারেনি। কেউ কথা বলতে পারে না চাকরির ভয়ে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে কোনো কিছুই থাকবে না। এই হলো আওয়ামী লীগ। যারা বাকশাল করেছিল। তারা আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমাদের হাইকোর্ট জামিন দিলে নিম্ন আদালতে তা বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যেন তৈরি না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

দেশের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শফিউল আলম প্রধান একটি সাম্য ও মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু আজও সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ এই সরকার দিচ্ছে না। কারণ, তারা তাদের মাথা বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। তারা অন্যায়ভাবে র্যা ব, পুলিশ ও দলীয় গুণ্ডা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমাতে চায়।

শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শফিউল আলম প্রধান কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন, তারা জানেন, শফিউল আলম প্রধান একজন ত্যাগী, দেশপ্রেমিক, বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তিনি পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তিনি নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, এনপিপির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, নবীউল্লাহ নবী চৌধুরী, তাঁতি দলের কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।