Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তরাখণ্ডে মাদরাসা ভাঙ্গা নিয়ে সহিংসতা, নিহত ৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশে একটি মসজিদ ও মাদরাসা গুড়িয়ে দেওয়ার পর ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৫০ জন। এদিকে সহিংসতার জেরে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বেআইনিভাবে নির্মিত একটি মাদরাসা পৌরসভার কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা ভেঙ্গে দিতে গেলে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় পাথর ছোঁড়া। পেট্রোল বোমাও ছোঁড়া হয়, বহু গাড়ি, মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।

প্রশাসন জানায়, সংঘর্ষে চার জন মারা গেছেন। তবে নিহতদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ-প্রশাসন।

বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানান, আদালতের নির্দেশে ওখানে জবরদখল সরাতে গিয়েছিল কর্মকর্তা ও পুলিশের একটি দল। কিছু ‘সমাজ বিরোধী’ সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধায়। বাড়তি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, একই সঙ্গে দেখামাত্র গুলির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বনভুলপুরা থানাতেও হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা এবং পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।

নৈনিতালের সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট প্রহ্লাদ মীনা বলেছেন, মাদরাসাটি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। আগেই এটি ভেঙে ফেলার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে জেলা প্রশাসক বন্দনা সিং সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়। কোনও একটি ধর্মের মানুষ যে পুলিশের ওপরে হামলা চালিয়েছেন, এমনটা নয়। রাজ্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এখানে।’

নৈনিতালের জেলা শাসক বন্দনা সিং জানিয়েছেন, স্থানীয় থানায় হামলা চালিয়ে উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সহিংসতায় আহতদের মধ্যে এক ডজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের সদস্যও রয়েছেন।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রাতের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর চারটি ব্যাটেলিয়নসহ আশেপাশের জেলাগুলি থেকে পুলিশ বাহিনীকে হলদওয়ানিতে ডাকা হয়। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও। গোটা রাজ্যেই সতর্কতা ও কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বনভুলপুরার বাসিন্দা জাফর সিদ্দিকি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, আবদুল মালিক নামে এক ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে জমিটি লিজ নিয়ে মসজিদটি বানিয়েছিলেন।

বনভুলপুরার এই বাসিন্দা বলন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে পুলিশ এই এলাকায় আসা যাওয়া করছিল। তারা বলছিল যে মাদরাসা এবং মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসনের লোকজন একটি বুলডোজার মেশিন নিয়ে এখানে পৌঁছায়। বিকেল পাঁচটা-ছয়টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখি পাথর ছোঁড়া হয়েছে, কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় এই বাসিন্দার কথায়, ‘কিছু লোক থানায় গিয়ে ভাঙচুর করেছে। এই পুরো ঘটনা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে চলে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি তো বাড়িতে তালা বন্ধ করে রয়েছি।’

স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টাল হলদওয়ানি লাইভের সম্পাদক পঙ্কজ বলেছেন, তিনি এবং বাকি সাংবাদিকরা পুলিশ ও প্রশাসনের একটি দলের সঙ্গে জবরদখল উচ্ছেদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তখনই কয়েকটি বাড়ির ছাদ থেকে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। এতে এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তার নিজের স্কুটার এবং বেশ কয়েকটি সাংবাদিকের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

উত্তরাখণ্ডে মাদরাসা ভাঙ্গা নিয়ে সহিংসতা, নিহত ৪

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশে একটি মসজিদ ও মাদরাসা গুড়িয়ে দেওয়ার পর ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৫০ জন। এদিকে সহিংসতার জেরে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বেআইনিভাবে নির্মিত একটি মাদরাসা পৌরসভার কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা ভেঙ্গে দিতে গেলে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় পাথর ছোঁড়া। পেট্রোল বোমাও ছোঁড়া হয়, বহু গাড়ি, মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।

প্রশাসন জানায়, সংঘর্ষে চার জন মারা গেছেন। তবে নিহতদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ-প্রশাসন।

বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানান, আদালতের নির্দেশে ওখানে জবরদখল সরাতে গিয়েছিল কর্মকর্তা ও পুলিশের একটি দল। কিছু ‘সমাজ বিরোধী’ সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধায়। বাড়তি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, একই সঙ্গে দেখামাত্র গুলির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বনভুলপুরা থানাতেও হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা এবং পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।

নৈনিতালের সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট প্রহ্লাদ মীনা বলেছেন, মাদরাসাটি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। আগেই এটি ভেঙে ফেলার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে জেলা প্রশাসক বন্দনা সিং সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়। কোনও একটি ধর্মের মানুষ যে পুলিশের ওপরে হামলা চালিয়েছেন, এমনটা নয়। রাজ্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এখানে।’

নৈনিতালের জেলা শাসক বন্দনা সিং জানিয়েছেন, স্থানীয় থানায় হামলা চালিয়ে উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সহিংসতায় আহতদের মধ্যে এক ডজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের সদস্যও রয়েছেন।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রাতের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর চারটি ব্যাটেলিয়নসহ আশেপাশের জেলাগুলি থেকে পুলিশ বাহিনীকে হলদওয়ানিতে ডাকা হয়। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও। গোটা রাজ্যেই সতর্কতা ও কারফিউ জারি করা হয়েছে।

বনভুলপুরার বাসিন্দা জাফর সিদ্দিকি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, আবদুল মালিক নামে এক ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে জমিটি লিজ নিয়ে মসজিদটি বানিয়েছিলেন।

বনভুলপুরার এই বাসিন্দা বলন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে পুলিশ এই এলাকায় আসা যাওয়া করছিল। তারা বলছিল যে মাদরাসা এবং মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসনের লোকজন একটি বুলডোজার মেশিন নিয়ে এখানে পৌঁছায়। বিকেল পাঁচটা-ছয়টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখি পাথর ছোঁড়া হয়েছে, কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় এই বাসিন্দার কথায়, ‘কিছু লোক থানায় গিয়ে ভাঙচুর করেছে। এই পুরো ঘটনা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে চলে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি তো বাড়িতে তালা বন্ধ করে রয়েছি।’

স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টাল হলদওয়ানি লাইভের সম্পাদক পঙ্কজ বলেছেন, তিনি এবং বাকি সাংবাদিকরা পুলিশ ও প্রশাসনের একটি দলের সঙ্গে জবরদখল উচ্ছেদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তখনই কয়েকটি বাড়ির ছাদ থেকে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। এতে এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তার নিজের স্কুটার এবং বেশ কয়েকটি সাংবাদিকের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।