Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামি সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় মূল্যবোধ সামঞ্জস্যগত সমস্যা রয়েছে : ইতালির প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ইসলামি সংস্কৃতি এবং আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্যের সমস্যা রয়েছে। ইতালিতে ইসলাম ধর্মের কোনো জায়গা নেই।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ইতালির রাজধানী রোমে মেলোনি তার ডানপন্থি দল দ্য ব্রাদার্স অব ইতালি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মতে, ইসলামে বর্ণিত সংস্কৃতি ইউরোপীয় সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের মধ্যে কোনো মিল নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক সংস্কৃতি আর আমাদের (ইউরোপের) নাগরিকদের আদর্শ ও অধিকার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইতালিতে শরিয়া আইন চালু করতে দেয়া যাবে না। আমাদের সভ্যতার আদর্শ সামান্য আলাদা।

তিনি এসময় সৌদি আরবের কঠোর শরিয়া আইনেরও সমালোচনা করেন, যার অধীনে ধর্মত্যাগ এবং সমকামিতা ফৌজদারি অপরাধ। শরিয়া আইন ইসলামিক আইন হিসেবে পরিচিত। এটা এসেছে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন এবং সুন্নাহ ও হাদীস থেকে।

মেলোনি বলেন, শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপ এবং ধর্মত্যাগ ও সমকামিতার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। ইউরোপের নানা প্রান্তে ইসলামের কিছু আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেই আমাদের সঙ্গে মানায় না। আমাদের মূল্যবোধ একেবারেই আলাদা।

ওই অনুষ্ঠানে অভিবাসনের বিরুদ্ধেও কথা বলেন মেলোনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার বক্তব্যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল থামাতে ইতালির নতুন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

সম্প্রতি ইতালির মতোই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সুনাকের যুক্তরাজ্যও। এমনকি অভিবাসীদের তাড়াতে আফ্রিকার রুয়ান্ডার সঙ্গে বিতর্কিত একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তার দেশ।

অবশ্য ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে মেলোনির এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য নতুন নয়। গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে অসংখ্যবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ উগরে দিয়েছেন তিনি। সরকার গঠনের পর গত এক বছরে ইসলামবিরোধী অনেক পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি।

ইউরোপজুড়ে প্রথা বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জাতীয় নির্বাচনেও তার ফল দেখা যাচ্ছে। জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখন পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদ, কট্টর ডানপন্থি বা কট্টর বামপন্থি দলগুলোকে ভোট ক্ষমতায় আনছে। যা মূলধারার রাজনীতিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ইউরোপে গত দুই দশক ধরে কট্টরপন্থা বা উগ্রপন্থা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। যে ইউরোপকে এক সময় উদারপন্থি গণতন্ত্রের দুর্গ বলা হত, সেখানে এখন অভিবাসনবিরোধী, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভালো করছে। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি বা সুইডেনের মতো বেশ কিছু দেশে এসব দল প্রধান রাজনৈতিক দলের কাতারে উঠে আসছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

ইসলামি সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় মূল্যবোধ সামঞ্জস্যগত সমস্যা রয়েছে : ইতালির প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ইসলামি সংস্কৃতি এবং আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্যের সমস্যা রয়েছে। ইতালিতে ইসলাম ধর্মের কোনো জায়গা নেই।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ইতালির রাজধানী রোমে মেলোনি তার ডানপন্থি দল দ্য ব্রাদার্স অব ইতালি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মতে, ইসলামে বর্ণিত সংস্কৃতি ইউরোপীয় সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের মধ্যে কোনো মিল নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক সংস্কৃতি আর আমাদের (ইউরোপের) নাগরিকদের আদর্শ ও অধিকার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইতালিতে শরিয়া আইন চালু করতে দেয়া যাবে না। আমাদের সভ্যতার আদর্শ সামান্য আলাদা।

তিনি এসময় সৌদি আরবের কঠোর শরিয়া আইনেরও সমালোচনা করেন, যার অধীনে ধর্মত্যাগ এবং সমকামিতা ফৌজদারি অপরাধ। শরিয়া আইন ইসলামিক আইন হিসেবে পরিচিত। এটা এসেছে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন এবং সুন্নাহ ও হাদীস থেকে।

মেলোনি বলেন, শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপ এবং ধর্মত্যাগ ও সমকামিতার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। ইউরোপের নানা প্রান্তে ইসলামের কিছু আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেই আমাদের সঙ্গে মানায় না। আমাদের মূল্যবোধ একেবারেই আলাদা।

ওই অনুষ্ঠানে অভিবাসনের বিরুদ্ধেও কথা বলেন মেলোনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার বক্তব্যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল থামাতে ইতালির নতুন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

সম্প্রতি ইতালির মতোই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সুনাকের যুক্তরাজ্যও। এমনকি অভিবাসীদের তাড়াতে আফ্রিকার রুয়ান্ডার সঙ্গে বিতর্কিত একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তার দেশ।

অবশ্য ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে মেলোনির এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য নতুন নয়। গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে অসংখ্যবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ উগরে দিয়েছেন তিনি। সরকার গঠনের পর গত এক বছরে ইসলামবিরোধী অনেক পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি।

ইউরোপজুড়ে প্রথা বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জাতীয় নির্বাচনেও তার ফল দেখা যাচ্ছে। জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখন পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদ, কট্টর ডানপন্থি বা কট্টর বামপন্থি দলগুলোকে ভোট ক্ষমতায় আনছে। যা মূলধারার রাজনীতিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ইউরোপে গত দুই দশক ধরে কট্টরপন্থা বা উগ্রপন্থা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। যে ইউরোপকে এক সময় উদারপন্থি গণতন্ত্রের দুর্গ বলা হত, সেখানে এখন অভিবাসনবিরোধী, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভালো করছে। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি বা সুইডেনের মতো বেশ কিছু দেশে এসব দল প্রধান রাজনৈতিক দলের কাতারে উঠে আসছে।