Dhaka শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলকে হুমকি দিলো হিজবুল্লাহর প্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

লেবাননে যুদ্ধ হলে কোনো নিয়মনীতি মানা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ। সংস্থাটির মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তার দেশের মাটিতে হামাস নেতা সালেহ আল-আরৌরিকে যারা হত্যা করেছে তারা শাস্তি পাবে। এই বিপজ্জনক অপরাধের হোতারা বিনা জবাবে ও বিনা শাস্তিতে পার পাবে না।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবার রাতে এক ড্রোন হামলায় নিহত হন সালেহ আরৌরি। এরপর বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এসব কথা বলেন নাসরুল্লাহ।

তিনি বলেন, বৈরুতে মিত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের উপ-প্রধানের হত্যা জঘন্য অপরাধ, যার পরে আমরা চুপ থাকতে পারি না।

বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়ে এলাকাটি হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এবং সালেহ আল-আরৌরি হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা বলয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি হামলার শিকার হন। হিজবুল্লাহ নেতা এ সম্পর্কে বলেন, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল এর আগে আর কখনও ওই এলাকায় হামলা করার সাহস দেখায়নি।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গাজা যুদ্ধের অজুহাতে লেবাননের মাটিতে সরাসরি যেকোনো হামলার কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বলেন, শত্রু যদি লেবাননের ভূমিতে যুদ্ধ করতে চায় তাহলে আমরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করব না। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

ইসরায়েল গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হাত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এরপর থেকে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে গোলাগুলি বিনিময় হলেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে হিজবুল্লাহ।

নাসরুল্লাহ তার ভাষণে বলেন, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও তারা এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে। গাজা আগ্রাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কোনো কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

ভাষণে তিনি সালেহ আল-আরৌরি ও তার পাঁচ সহকর্মীর পরিবারবর্গকে শোক ও সমবেদনা জানান। আরৌরিকে ‘ভাই’ ও একজন ‘মহান কমান্ডার’ উল্লেখ করে তিনি এটিকে লেবাননের ভূমিতে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ‘নির্লজ্জ হামলা’ বলে বর্ণনা করেন।

নিজের বক্তব্যে হাসান নাসরুল্লাহ এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করার পাশাপাশি সালেহ আল-আরৌরির হত্যাকাণ্ডকে ইসরায়েলের প্রকাশ্য আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছেন। এ ঘটনায় তিনি হামাসের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে হামাসের কার্যালয় লক্ষ্য করে এই ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলার লক্ষ্যবিন্দুতে ছিলেন আরউরি। পরে হামাসের সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে আরউরিসহ সাতজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাত আরও উসকে দিয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকেও হামলার নিন্দা জানানো হয়। অন্যদিকে, লেবানন ঘোষণা দিয়েছে যে এ হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হবে। তবে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

সালেহ আল-আরউরি হামাসের সামরিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দখলকৃত গাজার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম নেওয়া আরউরির দীর্ঘ ১৫ বছর কেটেছে ইসরায়েলের কারাগারে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেবাননে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন। তবে চলমান সংঘাতে হামাসের রণনীতির একজন মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর এখন পর্যন্ত গাজায় ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং অর্ধলক্ষের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজকে অদপস্ত ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে : নাহিদ ইসলাম

ইসরায়েলকে হুমকি দিলো হিজবুল্লাহর প্রধান

প্রকাশের সময় : ০৩:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

লেবাননে যুদ্ধ হলে কোনো নিয়মনীতি মানা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ। সংস্থাটির মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তার দেশের মাটিতে হামাস নেতা সালেহ আল-আরৌরিকে যারা হত্যা করেছে তারা শাস্তি পাবে। এই বিপজ্জনক অপরাধের হোতারা বিনা জবাবে ও বিনা শাস্তিতে পার পাবে না।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবার রাতে এক ড্রোন হামলায় নিহত হন সালেহ আরৌরি। এরপর বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এসব কথা বলেন নাসরুল্লাহ।

তিনি বলেন, বৈরুতে মিত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের উপ-প্রধানের হত্যা জঘন্য অপরাধ, যার পরে আমরা চুপ থাকতে পারি না।

বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়ে এলাকাটি হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এবং সালেহ আল-আরৌরি হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা বলয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি হামলার শিকার হন। হিজবুল্লাহ নেতা এ সম্পর্কে বলেন, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল এর আগে আর কখনও ওই এলাকায় হামলা করার সাহস দেখায়নি।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গাজা যুদ্ধের অজুহাতে লেবাননের মাটিতে সরাসরি যেকোনো হামলার কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বলেন, শত্রু যদি লেবাননের ভূমিতে যুদ্ধ করতে চায় তাহলে আমরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করব না। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

ইসরায়েল গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হাত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এরপর থেকে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে গোলাগুলি বিনিময় হলেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে হিজবুল্লাহ।

নাসরুল্লাহ তার ভাষণে বলেন, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও তারা এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে। গাজা আগ্রাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কোনো কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

ভাষণে তিনি সালেহ আল-আরৌরি ও তার পাঁচ সহকর্মীর পরিবারবর্গকে শোক ও সমবেদনা জানান। আরৌরিকে ‘ভাই’ ও একজন ‘মহান কমান্ডার’ উল্লেখ করে তিনি এটিকে লেবাননের ভূমিতে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ‘নির্লজ্জ হামলা’ বলে বর্ণনা করেন।

নিজের বক্তব্যে হাসান নাসরুল্লাহ এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করার পাশাপাশি সালেহ আল-আরৌরির হত্যাকাণ্ডকে ইসরায়েলের প্রকাশ্য আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছেন। এ ঘটনায় তিনি হামাসের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে হামাসের কার্যালয় লক্ষ্য করে এই ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলার লক্ষ্যবিন্দুতে ছিলেন আরউরি। পরে হামাসের সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে আরউরিসহ সাতজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাত আরও উসকে দিয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকেও হামলার নিন্দা জানানো হয়। অন্যদিকে, লেবানন ঘোষণা দিয়েছে যে এ হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হবে। তবে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

সালেহ আল-আরউরি হামাসের সামরিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দখলকৃত গাজার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম নেওয়া আরউরির দীর্ঘ ১৫ বছর কেটেছে ইসরায়েলের কারাগারে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেবাননে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন। তবে চলমান সংঘাতে হামাসের রণনীতির একজন মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর এখন পর্যন্ত গাজায় ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং অর্ধলক্ষের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।