দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি :
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সুবিচারকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। তারা বিচারের নামে অবিচার করেছেন। সুবিচারের মাধ্যমে কেউ যদি প্রকৃত অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তাকে শাস্তি দিতে হবে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ বলেছিলেন, এদেশে গণতন্ত্র দরকার নেই-দরকার উন্নয়নের। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করেছে, সিমেন্টের পরিবর্তে ছাই ব্যবহার করেছে। উন্নয়নের নাম বলে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যখনই তারা (আওয়ামী লীগ) অন্যায় করেছে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমাদেরকে মিটিং-মিছিল করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাই বলে আমরা বসে থাকিনি। যখনই দেশ এবং জনগণের বিপক্ষে সরকার অবস্থান নিয়েছে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা যখনই মিছিল করতাম তখনই বুঝতাম আমাদের কেউ গ্রেপ্তার হবে, কেউ মারা যাবে, কেউ গুম হতে পারে, কিংবা গুলি করে পঙ্গু বানিয়ে ফেলতে পারে, মামলা দিয়ে জেলে দিতে পারে। কিন্তু আমরা শুধু আল্লাহকে পরোয়া করেছি, এসবকে পরোয়া করিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ছিলাম। যেখানেই খরা, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে মজলুম সংগঠন হিসেবে সবার আগে মানবিক দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কাছে পৌঁছে গেছি। পুরো সাড়ে ১৫ বছর ধরে আমরা এভাবেই তিলে তিলে সাহায্য করেছি। ওরা (আওয়ামী লীগ) আমাদের সহ্য করতে পারেনি, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়েছে। বন্যায় দেশ ভাসছে কিন্তু ওরা কিছু করে না। আমরা ভালোবেসে সহানুভূতি নিয়ে জনগণের কাছে যাব সেটাও সহ্য করেনি। আমরা বলেছি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যদি আমাদেরকে গ্রেপ্তার করে করুক আমরা পরোয়া করি না। এই ধরনের আচরণ পুরোটা সময়জুড়ে করেছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকার নিজেরা অপকর্ম করে জামায়াতের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন। যখনই কোনো স্থানে কোনো অপকর্ম হতো, তখনই জামায়াতের উপর দায় চাপানোর চেস্টা করেছে। এরা ঘুমের মধ্যেও জামায়াতে ইসলামীকে স্বপ্নে দেখেন।
জামায়াতের আমির বলেন, দেশে প্রতিটি খুন, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও ঘুসের বিচার হতে হবে। না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। যারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে এই দেশকে মুক্ত করেছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। আমরা তরুণদের হাতে দেশ তুলে দিতে চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তারা (ভারত) গোলাম বানাতে চেয়েছিল। আর শেখ হাসিনা তাদের এজেন্ট। তাই তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা আমাদের ১১ শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। এই দিনাজপুরের একজন বিচারক বলতেন, তিনি না কি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। কিন্তু আমরা বলি তিনি শপথ ভঙ্গের বিচারপতি। তার বিরুদ্ধে এ কারণেই ফৌজদারি মামলা হতে পারে।
শাপলা চত্বরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বলে, শাপলা চত্বরে নাকি কোনো আলেমকে হত্যা করা হয়নি। সেখানে না কি আলেমরা রং ছিটিয়ে দিয়েছেন। কতটা নির্লজ্জ হলে একজন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন। তারা মনে করেছিল জামায়াতের কর্মীদের গুম-খুন করে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু আজ তারা কই? তারা দেশের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাঁধা দিয়েছে। তারা নিজেরাও কিছু করেনি, আমাদেরও করতে দেয়নি।
হিন্দু ধর্মের লোকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে অন্য সম্প্রদায়ের দুজন মানুষ বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে আতঙ্ক থাকবে না। নির্বাচনের পর আর হামলা-মামলা হবে না। আমরা সনাতন ধর্মের মানুষ আতঙ্ক মুক্ত থাকতে পারব। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা এমন একটি দল খুঁজেন যারা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে। একটু বিবেক দিয়ে খুঁজলেই পাবেন।
তিনি আরও বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জে গরু চরি করে, জমি দখল করে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বললেন জামায়াত অগ্নিসংযোগ করেছে। কিন্তু দুদিন পরই জুলুমের স্বীকার হিন্দুরা বললেন, এখানে জামায়াতরা আসেনি।
জামায়াত আমির বলেন, তারা বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা আর বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। কিন্তু আজ দেখেন, এই সমাবেশে এক পাশে পুরুষ, আরেক পাশে হাজার হাজার নারী। আমরা বলি, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা আরও দুটি জিনিস নিয়ে চলাফেরা ও কর্ম করবে। আর তা হলো সম্মান ও নিরাপত্তা। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল না।
দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজউদ্দীন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরার সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা আব্দুল হাকিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আফতাব উদ্দীন মোল্লা, আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার, ঠাকুরগাঁও জেলা আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, পঞ্চগড় জেলা আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন প্রমুখ।