নিজস্ব প্রতিবেদক :
টানা কয়েক মাস ধরে ডেঙ্গুর তীব্র প্রকোপ এবং মৃত্যুর মিছিলের পর, অবশেষে ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য একটি দিন দেখলো বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের কোথাও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ফলে প্রায় আড়াই মাস পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য একটি দিন কাটালো বাংলাদেশ। এর আগে সবশেষ গত ৪ অক্টোবর দেশে ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হয়নি। তবে, এই সময়ের মধ্যে নতুন করে আরও ৩৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৭৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই রোগীদের মধ্যে— বরিশাল বিভাগে ৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৭২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫২ জন, খুলনা বিভাগে ৪৪ জন, ময়মনসিংহে ১৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০ জন, রংপুরে ২ জন, এবং সিলেটে ১ জন রোগী রয়েছেন।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৯৮ হাজার ৮৭৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৪৮ জন, যার মধ্যে ৫১ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ।
প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়, তবে ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। জুন মাস থেকে শীতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। সে বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮০৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন।
গত বছর, ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জন মারা গিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।
২০১৯ সালে দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ৩০০ জন মারা যান। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল, তবে ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন আক্রান্ত হন এবং ১০৫ জন মারা যান। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ এবং মশাবাহিত রোগে ২৮১ জন মারা গিয়েছিলেন।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এখনও দেশের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সংকট। যদিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে, তবে সকলেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।