কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম আবাসন ও তৎসংলগ্ন বাঘ খাওয়ার চর গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। গ্রামটি উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে নীলকমল ও ধরলা নদীর সংযোগকারী একটি খাল দিয়ে বিচ্ছিন্ন। ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলেও এর সুবিধা ভোগের আগেই তা উল্টে যায়। আট বছর ধরে খালেই উল্টে আছে সেতুটি। এতে হাজারো মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধনীরাম আবাসনগামী রাস্তার খালের ওপর ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেন। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিম্নমানের সামগ্রী আর নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি ভেঙে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এরপর নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কয়েক দফা তদন্ত হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ কিংবা প্রতিকার কোনোটাই মেলেনি।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কয়েক দশকের দাবির পর ২০১৮ সালে খালের ওপর একটি সেতু পেলেও নির্মাণের মাত্র তিন মাসে সেটি উল্টে যায়। এরপর প্রায় আট বছর পার হলেও নতুন সেতু নির্মাণ কিংবা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সেতুটি খালের মাঝে এখনও উল্টে আছে। ড্রামের ভেলা আর রশির সাহায্যে খালের পানি পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয় লোকজন। নারী ও শিশু শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ পরিবারের হাজারের বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গবাদিপশু পারাপারেও একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না কেউ।
খালের ওপারের বাসিন্দারা বলছেন, একটি সেতুর অভাবে চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে স্থানীয়দের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এ দুর্দশা চলে আসছে। এ অবস্থার অবসানে ওই খালের ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
ভোগান্তির কথা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা কোরবান আলী ও মনোয়ারা বেগম জানান, পূর্ব ধনীরাম আবাসনের শতাধিক পরিবারসহ বাঘ খাওয়ার চরের কয়েকশ পরিবারকে উপজেলা শহরে যাতায়াত ও বাজারঘাট করতে ওই খালের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। ওটাই একমাত্র পথ। বছরের আট মাস খালে পানি থাকে। ড্রামের ওপর কাঠের চ্যালা দিয়ে ভেলা বানিয়ে রশি টেনে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী চলাফেরা করছেন। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ নারী ও রোগীদের ভেলায় করে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় ছোট শিক্ষার্থীরা পানিতে পড়ে যায়। এতে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়।
মনোয়ারা বলেন, প্রতিদিন দড়ি টানিয়া ড্রামের ভেলাত করি খাল পাড় হওয়া লাগে। এই যন্ত্রণার শ্যাষ কোনদিন হইবে। ছাওয়া-পাওয়ার স্কুলে যাওয়া কষ্ট হয়। রোগী পারপার আরও সমস্যা। সরকারক কন ব্রিজটা ভালো করি দেউক।
ভেলা দিয়ে খাল পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদুল। ওই এলাকার সব শিক্ষার্থীর একই ভোগান্তি। শহিদুল বলেন, বর্ষা বলেন আর শীত, প্রতিদিন ড্রামের ভেলায় উঠে রশি টেনে খাল পার হতে হয়। অনেক সময় শিশুরা বইসহ পানিতে পড়ে যায়। আমাদের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করে দিলে সবার খুব উপকার হতো।
বাসিন্দাদের যোগাযোগ ভোগান্তি নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ জানতে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুমকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নেবো। ওই এলাকাবাসীর পক্ষে আমাকে একটি আবেদন দিলে তাদের যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি 
























