নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ‘তৃণমূল বিএনপি’। নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বুধবার (৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
শমসের মবিন বলেন, আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছি। তৃণমূল বিএনপি দলীয় নিয়ম নীতি মেনে পরিচালিত হবে। প্রাইভেট কোম্পানি হবে না। তৃণমূল বিএনপি হবে বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস।
তিনি বলেন, আমাদের দলকে এমনভাবে সংগঠিত করতে চাই যাতে করে শুধু রাজনীতি নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
সুষ্ঠু রাজনীতিতে বিশ্বাস করি উল্লেখ করে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, জ্বালাও পোড়াও রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। সুষ্ঠু রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা হত্যার রাজনীতি সহিংসতাকে সমর্থন করি না। সুষ্ঠু রাজনীতি হবে সুশাসনের ভিত্তি। নির্বাচনে কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা অক্ষরে অক্ষের পালন করবে এটা আমাদের দাবি।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আমাদের দলকে এমনভাবে সংগঠিত করতে চাই যাতে করে শুধু রাজনীতি নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। তবে আশা করব, নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তারা সেই ক্ষমতা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে; যাতে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় এবং প্রতিটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
তৃণমূল বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা কোনোভাবেই সহিংসতাকে সমর্থন করি না। আামাদের মূলমন্ত্র সুস্থ রাজনীতি, সুশাসেনর মূল ভিত্তি। সেটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তৃণমূল বিএনপি কাজ করছে।
মজুদদার ও মোনাফাখোরদের বিরুদ্ধে ও জনগণের পক্ষে কাজ করতেই এই দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উল্লেখ করে শমসের মবিন বলেন, যখনই আলু আমদানির খবর বের হলো, আলুর ট্রাক সীমান্ত পার হওয়ার আগেই মুজদদাররা বাজারে আলু ছেড়ে দিল। অর্থাৎ আলু তাদের কাছে মুজদ ছিল। এই মজুদদারদেরকে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সরকার? তৃণমূল বিএনপি সেই জায়গাটাতে কাজ করবে।
সর্বনিম্ন মজুরির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য এই পর্যায়ে গেছে শ্রমিকরা যে বেতন পায় তা দিয়ে দুই বেলা খাবার খেতে পারে না। আমরা আশা করি, শিল্পকারখানাগুলো এই দিকে নজর দিবে এবং শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য বেতন দিবে। তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে জীবিকা নিশ্চিত করতে পারে।’
জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনকে সমর্থন করে ‘প্রতিটি আন্দোলনে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়’ এক নেতার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন শমশের মবিন বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো এখানে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তৃণমূলের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে মানুষ ক্ষতিগ্রস্তের সঙ্গে তাদের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনা করছেন। আমি তাকে ধিক্কার জানাই। কারণ তিনি জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের তুলনা করেছেন!’
এসময় গাজায় ইসরায়েলে বর্বর হামলার সমালোচনা করেন তিনি।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যে আজকে প্রতিকূলতা উপক্ষো করে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করছেন সেজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আপনাদের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ব্যারিস্টার নাজমূল হুদা তৃণমূল বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর আমাদের কাউন্সিল হয়। আজকে ৮ নভেম্বর এই অল্প সময়ের মধ্যে এই যোগদান করার যে ঢল দেখেছি, আমরা নিজেরাও উজ্জীবিত হচ্ছি। বাংলার মানুষ একটি নতুন ধরনের রাজনীতি দেখতে চায়। কেউ বিদেশে গিয়ে একের পর এক ভবন করবে, কেউ বাজারে গিয়ে আলু কিনতে পারবে না- এই রাজনীতি মানুষ দেখতে চায় না।
অনুষ্ঠানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমরা এমন একটা সমাজব্যবস্থা চাই যেটা হবে সুষ্ঠু রাজনীতি সুশাসনের মূলনীতি, যেটা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দিয়ে গেছেন। দেশ দুই বার স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু এখনও চলছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে। আমরা সেখান থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি আগেও বলেছি আবার বলতে চাই, তৃণমূল বিএনপি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না। এটা হবে জনগণের দল জনবান্ধব দল। আরও আশ্বস্ত করে বলতে চাই এই তৃণমূল হবে বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন সমাজ গড়তে চাই, জনগণ প্রশাসনমুখী হবে না, প্রশাসন হবে জনগনমুখী। বাংলাদেশ সব লোকই গাড়ি পোড়ায় না, যারা রাজনীতি করে তারা সবাই গাড়ি পোড়ায় না। আমি বিএনপির রাজনীতি করেছি, আমার বিরুদ্ধেও গাড়ি পোড়ানোর মামলা হয়েছে। পুলিশ ঢালাওভাবে মামলা দিয়ে দেয়।
প্রকৃত দোষীদের সাজার আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়ে তৈমুর বলেন, আমি বলব যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দল করে বলেই মামলা যেন না দেওয়া হয়।
সঞ্চালনা করেন তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান। সভাপতিত্ব করেন তৃণমূল বিএনপির কো-চেয়ারপারসন কে এ জাহাঙ্গীর মজুমদার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। তবে উপস্থিত হতে পারেননি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে তৃণমূল বিএনপি নির্বাহী চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা।
এর আগে সারা দেশ থেকে রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত ৩৫ জন তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেন। এর মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও শিক্ষক, আইনজীবী রয়েছেন।
এ সময় তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।