Dhaka বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএমএফ দলের সফর-সিদ্ধান্তে আগামী নির্বাচনের সম্পর্ক নেই : বাংলাদেশ ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
  • ১৯৫ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সফর এবং সিদ্ধান্তের সঙ্গে আগামী নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক বা প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য দেওয়া ৬ শর্তের দুই শর্ত পূরণ করতে পারিনি, বাকিগুলো পূরণ হয়েছে। তবে দুটি শর্ত কেন পূরণ করা যায়নি তার ব্যাখ্যা আইএমএফকে আমরা দিয়েছি। ব্যাখ্যায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর আইএমএফের বোর্ড মিটিং আছে। আশা করছি সেখানে দ্বিতীয় কিস্তির অনুমোদন আসবে। আমরা ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাবো।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে তিনি বলেন, নিট রিজার্ভ সম্পর্কে আমি এখন বুঝতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব সম্পর্কে বলতে পারবো। বিপিএম ৬ অনুযায়ী হিসাব প্রতি সপ্তাহে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে।

মেজবাউল হক আরও বলেন, আমরা যে দুই শর্ত পূরণ করতে পারিনি তার একটি নিট রিজার্ভ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়নে রাখা, সেটা হয়নি। অন্যটি হলো রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, বিপরীতে ১৪ হাজার পিছিয়ে রয়েছে আদায়।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু’একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। বিপিএম-সিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক পলিসিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের আগে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করলে এটি দ্রুত কমতে থাকবে। যারা পণ্য ধরে রেখেছে তারা ছেড়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে।

পলিসি রিফর্মের বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘যখন যে রিফর্ম বা সংশোধন প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক করবে। বিশেষ করে পলিসি এক্সচেঞ্জ রেট রিফর্মের থেকে বড় রিফর্ম আর নেই। নির্বাচনের জন্য আমরা বসে থাকিনি। যখন যে রিফর্মের প্রয়োজন হয়েছে, আমরা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক একযোগে কাজ করছে। কাজেই অর্থ পাচার বন্ধে আইএমএফের শর্তের দরকার নেই। একটি দেশ হিসেবে আমরা নিজের জায়গা থেকেই এটি বন্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

আইএমএফ নতুন করে কোনো শর্ত দেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের দেয়া আগের শর্তগুলো পূরণে কাজ করছে। প্রধান ছয়টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভ আর রাজস্ব বাদে সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আপাতত রিজার্ভ বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। এরই মধ্যে শর্ত মেনে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট চালু করা হয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ করা সময়সাপেক্ষ। তবে সে ক্ষেত্রেও কাজ চলছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিজার্ভে ডলার রেখে বসে থেকে তো লাভ নেই। রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচ করা অব্যাহত থাকবে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে চাইলে রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচের কোনো বিকল্প নেই।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বড় কোনো পদক্ষেপ নেই। এ ছাড়া ব্যাংকের মোট মুনাফার একটি অংশ খেলাপি ঋণ শোধে যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। আগামী বছর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইএমএফ দলের সফর-সিদ্ধান্তে আগামী নির্বাচনের সম্পর্ক নেই : বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশের সময় : ০৪:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সফর এবং সিদ্ধান্তের সঙ্গে আগামী নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক বা প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য দেওয়া ৬ শর্তের দুই শর্ত পূরণ করতে পারিনি, বাকিগুলো পূরণ হয়েছে। তবে দুটি শর্ত কেন পূরণ করা যায়নি তার ব্যাখ্যা আইএমএফকে আমরা দিয়েছি। ব্যাখ্যায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর আইএমএফের বোর্ড মিটিং আছে। আশা করছি সেখানে দ্বিতীয় কিস্তির অনুমোদন আসবে। আমরা ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাবো।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে তিনি বলেন, নিট রিজার্ভ সম্পর্কে আমি এখন বুঝতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব সম্পর্কে বলতে পারবো। বিপিএম ৬ অনুযায়ী হিসাব প্রতি সপ্তাহে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে।

মেজবাউল হক আরও বলেন, আমরা যে দুই শর্ত পূরণ করতে পারিনি তার একটি নিট রিজার্ভ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়নে রাখা, সেটা হয়নি। অন্যটি হলো রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, বিপরীতে ১৪ হাজার পিছিয়ে রয়েছে আদায়।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু’একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। বিপিএম-সিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক পলিসিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের আগে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করলে এটি দ্রুত কমতে থাকবে। যারা পণ্য ধরে রেখেছে তারা ছেড়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে।

পলিসি রিফর্মের বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘যখন যে রিফর্ম বা সংশোধন প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক করবে। বিশেষ করে পলিসি এক্সচেঞ্জ রেট রিফর্মের থেকে বড় রিফর্ম আর নেই। নির্বাচনের জন্য আমরা বসে থাকিনি। যখন যে রিফর্মের প্রয়োজন হয়েছে, আমরা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক একযোগে কাজ করছে। কাজেই অর্থ পাচার বন্ধে আইএমএফের শর্তের দরকার নেই। একটি দেশ হিসেবে আমরা নিজের জায়গা থেকেই এটি বন্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

আইএমএফ নতুন করে কোনো শর্ত দেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের দেয়া আগের শর্তগুলো পূরণে কাজ করছে। প্রধান ছয়টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভ আর রাজস্ব বাদে সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আপাতত রিজার্ভ বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। এরই মধ্যে শর্ত মেনে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট চালু করা হয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ করা সময়সাপেক্ষ। তবে সে ক্ষেত্রেও কাজ চলছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিজার্ভে ডলার রেখে বসে থেকে তো লাভ নেই। রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচ করা অব্যাহত থাকবে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে চাইলে রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচের কোনো বিকল্প নেই।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বড় কোনো পদক্ষেপ নেই। এ ছাড়া ব্যাংকের মোট মুনাফার একটি অংশ খেলাপি ঋণ শোধে যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। আগামী বছর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।