Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রের ঢেউ দেখতে পারকি চরে একদিন

  • আজহার মাহমুদ
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
  • ১৯০ জন দেখেছেন

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পারকি সমুদ্রসৈকত। দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকত। চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর। আমরাও আনন্দের সঙ্গে যাচ্ছি এই চরে। সময়টা ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম শহরের টাইগার পাস থেকে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। তবে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। তাই আমাদের বাড়তি কিছু সময় লেগেছিল।

এটি মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়। এটি একটি উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে পারকি সৈকত বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। যার কারণে আমাদেরও প্রাণ টানছিল যেতে। সেই টানেই আমরা পৌঁছলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থানে।

পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মেলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কাফকোর দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়াবে। বীচে ঢোকার পথে সরু রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। বীচে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউ বনও রয়েছে। যা দেখে সত্যি মনে হচ্ছে, আমরা কক্সবাজারেই আছি।

পৌঁছেই প্রথমে আমরা ফুটবল নিয়ে খেলতে নামলাম বীচে। সাগরের পাড়ে ফুটবল খেলার কী আনন্দ, সেটা নিশ্চয়ই সবার অজানা নয়। ফুটবল খেলে নামলাম সমুদের তীরে। যেখানে অসংখ্য পর্যটক আনন্দে মেতে উঠেছে। আমরাও তাদের সাথে আনন্দ ভাগভাগি করতে নেমেছি সমুদ্রে। ঢেউ আর বন্ধুদের দুষ্টুমি এক অন্যরকম আনন্দের স্বর্গে নিয়ে গেছে আমাদের। এরপর গোসল করে সবাই একটি স্থানীয় হোটেলে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। খাবারগুলো মোটামুটি ভালোই ছিল। ডাল, মাংস আর সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম।

এরপর সবাই বীচের পাশে ঝাউ বাগান ঘুরছি। এখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী বেড়াতে এসেছে। শিক্ষা সফরের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হচ্ছে। সেসব দেখছি। সমুদ্রের পাশে গিয়ে অনেকেই সূর্যাস্ত দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই পানির মধ্যে হাঁটছে। আমার কিছু বন্ধু আবার মোটরসাইকেলেও চড়ছে। পর্যটকদের চড়ার জন্য এসব গাড়ি নিয়ে অনেকেই বসে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে সবাই গাড়িতে উঠে গেলাম।

মন চাইছে থেকে যেতে। তবে সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। সবাই টাইগার পাসে এসে নামলাম সন্ধ্যা ৭ টায়। এরপর নাস্তা করে বিদায় নিলাম। অন্য কোনদিন অন্য কোনখানে আবারও আমরা বেড়াতে যাবো।

কীভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস বা টেম্পুতে শাহ আমানত সেতু বা কর্ণফুলি সেতু। সেখান থেকে আনোয়ারার বটতলী মোহছেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠবেন। আপনি অবশ্যই বটতলীর বাসে উঠবেন। হেল্পারকে বলবেন ‘সেন্টার’ নামক জায়গায় নামিয়ে দিতে। সেন্টারে নেমে সিএনজি বা রিকশা যোগে যেতে পারেন পারকি সৈকত। এ ছাড়া চট্টগ্রামের যেকোনো জায়গা থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে পারকি যেতে পারবেন। এ ছাড়া বাস বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যেতে পারবেন।

থাকবেন কোথায়: এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠছে মোটেল ও রিসোর্ট। পারকিতে রাত কাটাতে চাইলে স্থানীয় রিসোর্টে উঠতে পারেন। তবে পছন্দ না হলে চট্টগ্রাম শহরে রাত যাপন করতে পারেন। শহরে বেশ কিছু নান্দনিক হোটেল এবং মোটেল আছে।

খাবেন কোথায়: এখানে অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় ছোট হোটেল ছাড়াও আছে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। চাইলে যাওয়ার আগেই রেস্টুরেন্ট খাবার বুক দিতে পারেন। এ ছাড়া পিকনিক বা শিক্ষা সফরে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বিবিএ, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।

Tag :
জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

সমুদ্রের ঢেউ দেখতে পারকি চরে একদিন

প্রকাশের সময় : ০৫:১৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পারকি সমুদ্রসৈকত। দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকত। চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর। আমরাও আনন্দের সঙ্গে যাচ্ছি এই চরে। সময়টা ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম শহরের টাইগার পাস থেকে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। তবে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। তাই আমাদের বাড়তি কিছু সময় লেগেছিল।

এটি মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়। এটি একটি উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে পারকি সৈকত বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। যার কারণে আমাদেরও প্রাণ টানছিল যেতে। সেই টানেই আমরা পৌঁছলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থানে।

পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মেলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কাফকোর দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়াবে। বীচে ঢোকার পথে সরু রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। বীচে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউ বনও রয়েছে। যা দেখে সত্যি মনে হচ্ছে, আমরা কক্সবাজারেই আছি।

পৌঁছেই প্রথমে আমরা ফুটবল নিয়ে খেলতে নামলাম বীচে। সাগরের পাড়ে ফুটবল খেলার কী আনন্দ, সেটা নিশ্চয়ই সবার অজানা নয়। ফুটবল খেলে নামলাম সমুদের তীরে। যেখানে অসংখ্য পর্যটক আনন্দে মেতে উঠেছে। আমরাও তাদের সাথে আনন্দ ভাগভাগি করতে নেমেছি সমুদ্রে। ঢেউ আর বন্ধুদের দুষ্টুমি এক অন্যরকম আনন্দের স্বর্গে নিয়ে গেছে আমাদের। এরপর গোসল করে সবাই একটি স্থানীয় হোটেলে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। খাবারগুলো মোটামুটি ভালোই ছিল। ডাল, মাংস আর সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম।

এরপর সবাই বীচের পাশে ঝাউ বাগান ঘুরছি। এখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী বেড়াতে এসেছে। শিক্ষা সফরের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হচ্ছে। সেসব দেখছি। সমুদ্রের পাশে গিয়ে অনেকেই সূর্যাস্ত দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই পানির মধ্যে হাঁটছে। আমার কিছু বন্ধু আবার মোটরসাইকেলেও চড়ছে। পর্যটকদের চড়ার জন্য এসব গাড়ি নিয়ে অনেকেই বসে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে সবাই গাড়িতে উঠে গেলাম।

মন চাইছে থেকে যেতে। তবে সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। সবাই টাইগার পাসে এসে নামলাম সন্ধ্যা ৭ টায়। এরপর নাস্তা করে বিদায় নিলাম। অন্য কোনদিন অন্য কোনখানে আবারও আমরা বেড়াতে যাবো।

কীভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস বা টেম্পুতে শাহ আমানত সেতু বা কর্ণফুলি সেতু। সেখান থেকে আনোয়ারার বটতলী মোহছেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠবেন। আপনি অবশ্যই বটতলীর বাসে উঠবেন। হেল্পারকে বলবেন ‘সেন্টার’ নামক জায়গায় নামিয়ে দিতে। সেন্টারে নেমে সিএনজি বা রিকশা যোগে যেতে পারেন পারকি সৈকত। এ ছাড়া চট্টগ্রামের যেকোনো জায়গা থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে পারকি যেতে পারবেন। এ ছাড়া বাস বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যেতে পারবেন।

থাকবেন কোথায়: এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠছে মোটেল ও রিসোর্ট। পারকিতে রাত কাটাতে চাইলে স্থানীয় রিসোর্টে উঠতে পারেন। তবে পছন্দ না হলে চট্টগ্রাম শহরে রাত যাপন করতে পারেন। শহরে বেশ কিছু নান্দনিক হোটেল এবং মোটেল আছে।

খাবেন কোথায়: এখানে অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় ছোট হোটেল ছাড়াও আছে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। চাইলে যাওয়ার আগেই রেস্টুরেন্ট খাবার বুক দিতে পারেন। এ ছাড়া পিকনিক বা শিক্ষা সফরে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বিবিএ, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।