নিজস্ব প্রতিবেদক :
পুলিশের হাতে আটক হওয়া থেকে শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক শেহরিন আমিন ভুঁইয়া।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর দোয়েল চত্বরের পাশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী।
জানা যায়, রাজধানীর হাইকোর্ট মোড় ও দোয়েল চত্বরের মাঝামাঝি সড়কে এক শিক্ষার্থীকে আটক করার সময় অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী এবং শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূইয়া বাধা দেন।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে এ দুই শিক্ষকসহ উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা চলে। একপর্যায়ে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যেতে চায়।
এ সময় শেহরীন আমিনের হাত মুচড়ে দিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি তাকে মাটিতে ফেলে দেয় পুলিশ । পড়ে যাওয়ায় শেহরীন আমিন হাতে, হাঁটুতে ও পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।
গণমাধ্যমে পাওয়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থীকে রাস্তার পাশে আটক করে পুলিশ। ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যেতে চাইলে হাতে ধরে থাকেন শিক্ষক শেহরীন আমিন। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী।
পুলিশের এক কর্মকর্তা তখন বারবার বলেন, আমি এ শিক্ষার্থীকে চেক করে ছেড়ে দেব। ’ শেহরিন আমিন বলেন, ‘এরা আমার শিক্ষার্থী। আমি হাত ছাড়ব না। আচ্ছা ভাই একটু বলেন, ও কী করেছে? ও তো কিছুই করেনি।
পরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধু মোবাইল চেক করে ছেড়ে দেব। তখন শেহরীন আমিন বলেন, আপনি তো ফোন চেক করতে পারেন না।
এ সময় পুলিশ ওই শিক্ষার্থী অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শেহরীন আমিন ও অধ্যাপক নুসরাত চৌধুরী সবার সামনে তাকে চেক করতে বলেন। ওই শিক্ষার্থীও পুলিশের সাথে যেতে চাচ্ছিলেন না। পুলিশের ওই সদস্য শিক্ষার্থীকে বলেন, আমরা কিন্তু ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে বাধ্য হবো। আপনি কি চান, আমরা ফোর্স অ্যাপ্লাই করি?
ভিডিও ফুটেজের এক পর্যায়ে পুলিশকে ওই শিক্ষার্থীকে ধস্তাধস্তি করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ঘটনার পর অধ্যাপক নুসরাত চৌধুরী বলেন, আমরা এখানে কেবল দাঁড়াতে এসেছিলাম। আমাদের কী এখানে দাঁড়ানোর অধিকার নেই?
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে মেসেজ পাচ্ছিলাম। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, শিক্ষক হিসেবে আমরা পারিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য দাঁড়াতে না পারলে, আমি মনে করি না ১২০ জন শিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়িয়ে ক্লাস নেওয়ার নৈতিক অধিকার আমার থাকে। আমি সে অধিকার বোধ হয় হারিয়ে ফেলছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক শেহরিন ম্যাম পুলিশের আক্রমণে আহত হয়েছেন। দোয়েল চত্বর ও হাইকোর্টের মাঝামাঝি জায়গায় এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় নুসরাত ম্যাম ও শেহরিন ম্যাম বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তর্ক বির্তক চলতে থাকে। এ সময় এক পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং ম্যামের হাত মোচড় দিয়ে ছেলেটিকে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ম্যামকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ম্যাম আহত হন। ম্যাম হাতে, হাঁটুতে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। ধস্তাধস্তি করে পুলিশ ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়।
জানতে চাইলে শেহরীন আমিন ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্ট এর বোরহান উদ্দিন কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি ও আমার একজন সহপাঠী নুসরাত জাহান গিয়ে বাঁধা দেই। পুলিশকে বললাম তার অপরাধ কী? পুলিশ বললো তাকে চেক করব। তখন আমি পুলিশকে বলি চেক করার থাকলে এখানে করেন। আমাদের ব্যাগ, ফোন চেক করেন। পুলিশ তখন বার বার বলছিল, আমি কিন্তু বলপ্রয়োগ করব। এরপর পুলিশ ধস্তাধস্তি করে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ওই শিক্ষার্থীর হাত শক্ত করে ধরে রাখছিলাম। তখন একজন পুলিশ আমার হাত ধরে মুচড়ে দেয় ও আমাকে ধাক্কা দেয়। হাত মুচড়ে দেওয়াতে হাতে একটু বেশি ব্যথা পেয়েছি। এর বেশি বলার মত শক্তি আমার নেই।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের সঙ্গে আজ আমাদের সংহতি জানানোর কর্মসূচি ছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারিনি। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা সংহতি জানিয়েছি। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সকল কর্মসূচিতে আমাদের সমর্থন থাকবে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের কর্মসূচি ছিল মার্চ ফর জাস্টিস। সারাদেশে অন্তত আড়াই শতাধিক নিহত ও অন্তত ২৫ হাজার আহতের দাবি আন্দোলনকারীদের। এছাড়াও তাদের প্রথম সারির সমন্বয়কদের ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ এবং তাদের সব শেষ নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা লাগাতার কর্মসূচি করে আসছে।