Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুখ্যমন্ত্রী হলে ৬ মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বদলে দেবেন মিঠুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রাজ্যের সর্বত্র বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি। তাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে ছয় মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের সিস্টেম বদলে দেবেন, কলকাতায় পা রেখে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন বিজেপির মহাতারকা মিঠুন চক্রবর্তী। রাজ্যে শিক্ষা থেকে শিল্প— সব ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রেই ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এই সবকিছু বদলে দিতে পারেন তিনি।

শুক্রবার (২ জুন) সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এভিবিপি)-র ‘লিড বেঙ্গল স্টুডেন্টস কনক্লেভ’-এর প্রধান অতিথি ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। প্রথাগত বক্তব্য না রেখে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, এই অনুষ্ঠানে বিজেপির হয়ে আসেননি। ভালোবাসার তাগিদে এসেছেন।

নিজের ছাত্র জীবনে আন্দোলনে জাড়িয়ে পড়া থেকে বলিউডে তার প্রতিষ্ঠা পাওয়া কথা বলে উপস্থিত পড়ুয়াদের তিনি বলেন, আমি যখন বাংলা ছেড়ে যাই, এই বাংলা আজকের বাংলা ছিল না। আমি সেই বাংলাকে ফেরাতে আমি প্রতিবাদ করতে চাই। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে তোমাদের সঙ্গে আমি আছি। একজোট হয়ে মুখে টেপ লাগিয়ে, হাতে দড়ি বেঁধে বাংলায় আন্দোলন করতে হবে। কারণ মুখে টেপ না লাগালে বলবে তুমি গালিগালাজ করেছো। হাতে দড়ি না বাঁধলে বলবে তুমি ইট-পাটকেল ছুড়েঁছো। রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষিত হওয়া দরকার আজকের দিনে। রাজ্যের যে হাল, তারা যে ভাষায় কথা বলে কিছুই বুঝি না।

মহাগুরু পড়ুয়াদের বলেন, তোমাদের ছাড়া সমাজ ঘুরে দাঁড়াবে না। প্রতিটি কলেজকে টার্গেট করতে হবে। তোমাদের অনেক বাধা আসবে। কারণ, এই সরকার প্রশাসন তোমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তোমরা এটা করতে পারলে, আর তিনি বছর পরে অন্য বাংলা দেখবে। আমি ছাত্র আন্দোলন করেছি। করেছি যাতে বাংলার মানুষ সম্মানের সঙ্গে ভালো থাকে। আমি রাজনীতি করিনি, মানুষনীতি করেছি। আমি আগে ছাত্র পরিষদ করতাম। তারপর যা করেছি সবাই জানে। আমার কোনও এজেন্ডা নেই। আমি লিডার নই, ক্যাডার। আমি চাই বাংলার মানুষকে যাতে ভিক্ষা করতে না হয়। আজ বাংলার শিক্ষা যেখানে আছে সেখান থেকে শ্মশান খুব দূর নয়। শিক্ষাকে বাঁচাতে হবে সবাইকে নিয়ে। আমি ঠিক করেছি, বাংলার সব জায়গায় যাব ছাত্রদের উদ্ধুদ্ধ করতে।

কনক্লেভ শেষ হওয়ার পর মিঠুন চক্রবর্তী কড়াভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, এ রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। আইএএস, আইপিএস, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, যেখানেই হাত দেবেন, দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। পুরো সিস্টেমটা নষ্ট হয়ে গেছে। কোনও ২-৪ জন নেতাকে গ্রেফতার করলে কিছু হবে না। কারণ একজন দুজনের কাজ এটা নয়। সবাই দুর্নীতিগ্রস্থ। এই রাজ্য সরকার আদালত মানে না, প্রোটোকল মানে না। সিস্টেম মানে না। ভারতের ফেডারেল স্ট্রাকচারের বাইরে কাজ করে। তাই এই প্রশ্ন উঠছে যে এই রাজ্য কী আদৌ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে আছে? আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। পেলে আপনাদের জানাব।

এরপরেই মহাগুরু বলেন, নিজেকে খুব হতাশ লাগে। মনে হয় রাজ্যের জন্য কিছু করতে পারছি না। পুরো সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। যে যে সময় সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে তখন তখন গণআন্দোলন হয়েছে। গণআন্দোলন ছাড়া এই রাজ্যে কিছু হতে পারে না। কোনও প্রজন্মকে শেষ করতে গেলে আগে শিক্ষাকে শেষ করো। এই মুহূর্তে রাজ্যের কোনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে গেলে পরিবর্তন করতে হবে। সেটা ঠিক করবে মানুষ। আর যদি রাজনৈতিক দল বলতে বলেন, তাহলে আমি বলব বিজেপি। আমাকে যদি ছয় মাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী করে দেওয়া হয় তাহলে পশ্চিমবাংলা আর পশ্চিমবাংলা থাকবে না।

এদিন রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একহাত নেন মিঠুন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাংলায় যখনই কোনও ঘটনা ঘটেছে আমরা কিন্তু জেগেছি। তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এখন আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। কারণ যারা প্রতিবাদের সামনে থাকেন তাদের আত্মা বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের আত্মা মরে গেছে কি না জানি না। মরে গেলে আর জাগবে না। পড়াশুনা করা লোকেদের আবার কী আবেদন করব? তারা তো সব জেনে শুনে করছেন।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে যখন বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা চলছে তখনই গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মিঠুন চক্রবর্তী। অনেকেই ভেবেছিলেন তিনিই হয়ত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর পদাধিকারী হবেন। কিন্তু মিঠুন স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। শুধু দলের হয়ে প্রচারে অংশ নেবেন মাত্র।

যদিও পরবর্তীকালে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছেন মিঠুন। পাল্টা ছেড়ে কথা বলেনি ঘাসফুল শিবিরও। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেন, অভিনেতা হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তী একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তার মতো বিশ্বাসঘাতক আর নেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

মুখ্যমন্ত্রী হলে ৬ মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বদলে দেবেন মিঠুন

প্রকাশের সময় : ১১:০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রাজ্যের সর্বত্র বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি। তাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে ছয় মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের সিস্টেম বদলে দেবেন, কলকাতায় পা রেখে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন বিজেপির মহাতারকা মিঠুন চক্রবর্তী। রাজ্যে শিক্ষা থেকে শিল্প— সব ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রেই ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এই সবকিছু বদলে দিতে পারেন তিনি।

শুক্রবার (২ জুন) সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এভিবিপি)-র ‘লিড বেঙ্গল স্টুডেন্টস কনক্লেভ’-এর প্রধান অতিথি ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। প্রথাগত বক্তব্য না রেখে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, এই অনুষ্ঠানে বিজেপির হয়ে আসেননি। ভালোবাসার তাগিদে এসেছেন।

নিজের ছাত্র জীবনে আন্দোলনে জাড়িয়ে পড়া থেকে বলিউডে তার প্রতিষ্ঠা পাওয়া কথা বলে উপস্থিত পড়ুয়াদের তিনি বলেন, আমি যখন বাংলা ছেড়ে যাই, এই বাংলা আজকের বাংলা ছিল না। আমি সেই বাংলাকে ফেরাতে আমি প্রতিবাদ করতে চাই। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে তোমাদের সঙ্গে আমি আছি। একজোট হয়ে মুখে টেপ লাগিয়ে, হাতে দড়ি বেঁধে বাংলায় আন্দোলন করতে হবে। কারণ মুখে টেপ না লাগালে বলবে তুমি গালিগালাজ করেছো। হাতে দড়ি না বাঁধলে বলবে তুমি ইট-পাটকেল ছুড়েঁছো। রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষিত হওয়া দরকার আজকের দিনে। রাজ্যের যে হাল, তারা যে ভাষায় কথা বলে কিছুই বুঝি না।

মহাগুরু পড়ুয়াদের বলেন, তোমাদের ছাড়া সমাজ ঘুরে দাঁড়াবে না। প্রতিটি কলেজকে টার্গেট করতে হবে। তোমাদের অনেক বাধা আসবে। কারণ, এই সরকার প্রশাসন তোমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তোমরা এটা করতে পারলে, আর তিনি বছর পরে অন্য বাংলা দেখবে। আমি ছাত্র আন্দোলন করেছি। করেছি যাতে বাংলার মানুষ সম্মানের সঙ্গে ভালো থাকে। আমি রাজনীতি করিনি, মানুষনীতি করেছি। আমি আগে ছাত্র পরিষদ করতাম। তারপর যা করেছি সবাই জানে। আমার কোনও এজেন্ডা নেই। আমি লিডার নই, ক্যাডার। আমি চাই বাংলার মানুষকে যাতে ভিক্ষা করতে না হয়। আজ বাংলার শিক্ষা যেখানে আছে সেখান থেকে শ্মশান খুব দূর নয়। শিক্ষাকে বাঁচাতে হবে সবাইকে নিয়ে। আমি ঠিক করেছি, বাংলার সব জায়গায় যাব ছাত্রদের উদ্ধুদ্ধ করতে।

কনক্লেভ শেষ হওয়ার পর মিঠুন চক্রবর্তী কড়াভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, এ রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। আইএএস, আইপিএস, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, যেখানেই হাত দেবেন, দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। পুরো সিস্টেমটা নষ্ট হয়ে গেছে। কোনও ২-৪ জন নেতাকে গ্রেফতার করলে কিছু হবে না। কারণ একজন দুজনের কাজ এটা নয়। সবাই দুর্নীতিগ্রস্থ। এই রাজ্য সরকার আদালত মানে না, প্রোটোকল মানে না। সিস্টেম মানে না। ভারতের ফেডারেল স্ট্রাকচারের বাইরে কাজ করে। তাই এই প্রশ্ন উঠছে যে এই রাজ্য কী আদৌ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে আছে? আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। পেলে আপনাদের জানাব।

এরপরেই মহাগুরু বলেন, নিজেকে খুব হতাশ লাগে। মনে হয় রাজ্যের জন্য কিছু করতে পারছি না। পুরো সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। যে যে সময় সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে তখন তখন গণআন্দোলন হয়েছে। গণআন্দোলন ছাড়া এই রাজ্যে কিছু হতে পারে না। কোনও প্রজন্মকে শেষ করতে গেলে আগে শিক্ষাকে শেষ করো। এই মুহূর্তে রাজ্যের কোনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে গেলে পরিবর্তন করতে হবে। সেটা ঠিক করবে মানুষ। আর যদি রাজনৈতিক দল বলতে বলেন, তাহলে আমি বলব বিজেপি। আমাকে যদি ছয় মাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী করে দেওয়া হয় তাহলে পশ্চিমবাংলা আর পশ্চিমবাংলা থাকবে না।

এদিন রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একহাত নেন মিঠুন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাংলায় যখনই কোনও ঘটনা ঘটেছে আমরা কিন্তু জেগেছি। তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এখন আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। কারণ যারা প্রতিবাদের সামনে থাকেন তাদের আত্মা বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের আত্মা মরে গেছে কি না জানি না। মরে গেলে আর জাগবে না। পড়াশুনা করা লোকেদের আবার কী আবেদন করব? তারা তো সব জেনে শুনে করছেন।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে যখন বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা চলছে তখনই গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মিঠুন চক্রবর্তী। অনেকেই ভেবেছিলেন তিনিই হয়ত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর পদাধিকারী হবেন। কিন্তু মিঠুন স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। শুধু দলের হয়ে প্রচারে অংশ নেবেন মাত্র।

যদিও পরবর্তীকালে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছেন মিঠুন। পাল্টা ছেড়ে কথা বলেনি ঘাসফুল শিবিরও। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেন, অভিনেতা হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তী একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তার মতো বিশ্বাসঘাতক আর নেই।