বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন

মহামারীতে বিক্ষিপ্ত অনৈক্যে পর্যুদস্ত ইইউয়ের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

রিপোর্টারের নাম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০

যোগাযোগ ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্বই এখন কার্যত অবরুদ্ধ। আগের পাঁচ মাসে লকডাউনের কারণে শুধু ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ২৭ দেশের শীর্ষ নেতারা শুক্রবার (১৭ জুলাই) ও পরদিন শনিবার ব্রাসেলসে ‘স্পেশাল ইউরোপিয়ান কাউন্সিল মিটিং’-এ বসছেন। পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন তারা। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে ব্রাসেলসের এ বৈঠকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে।

এবার সম্মেলনের আবহটাই হবে ভিন্ন। নেতাদের মুখে থাকবে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই বসবেন তারা। তবে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠবে, নেতাদের অনেকের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব, যা-ও তৈরি করে দিয়েছে কভিড-১৯ মহামারী। আর্থিকসহ নানা বিষয় নিয়ে ইইউ নেতাদের অনেকের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে এই বৈঠকে যে সিদ্ধান্তটি নেতাদের অবশ্যই নিতে হবে।

এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যই হলো অর্থ, ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাদের এক ট্রিলিয়ন ইউরো বাজেট প্রয়োজন। এছাড়া একই সময়ের জন্য৭৫০ বিলিয়ন ইউরোর উদ্ধার বাজেটও প্রয়োজন হবে, যাকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাসী বাজেট। সঙ্গে রয়েছে ইইউকে চাঙ্গা করার নানা মিশন।

সব মিলিয়ে এবার ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।

বিভেদ তৈরি হওয়ার কারণও সুস্পষ্ট। কভিড-১৯ মহামারী চীনের পরপরই আঘাত হানে ইউরোপের দেশগুলোতে, সবার আগে বিপর্যস্ত হয় ইতালি। এ সময় দেশগুলো ব্রাসেলসের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে সংকট মোকাবেলার কথা ভুলে গিয়ে নিজ নিজ জাতির স্বার্থ সুরক্ষায় ব্রত হয়। ন্যূনতম কিংবা কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা না করেই সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, কেন্দ্রীয় সমন্বয় ছাড়াই জরুরি অর্থনৈতিক অবস্থা জারি করা হয়। এছাড়া যখন বিপর্যস্ত ইতালি জরুরি চিকিৎসা সাহায্যের আবেদন জানায়, তখন সাড়া ছিল খুবই নগণ্য। উত্তর ইতালির ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশে খানিকটা দাঁড়িয়েছে জার্মানি। পরে অবস্থার উন্নতি হয়, জার্মানির হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় ফ্রান্সের কিছু রোগীকে।

কভিড-১৯ মহামারী জাতিগুলোর মধ্যে সম্পর্কের যে ভাঙন ধরিয়েছে, তা জোড়া লাগাতে তৎপর ব্রাসেলস। এবারের সম্মেলনে ব্রাসেলসের নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করা হবে। অবশ্য এজন্য প্রয়োজন পড়বে অনেক অনেক অর্থ।

সবাই অবশ্য বাজেট বৃদ্ধির পক্ষে নয়। ‘মিতব্যয়ী চতুষ্টয়’ নামে পরিচিত নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ডেনমার্কের সঙ্গে এবার যোগ দিচ্ছে ফিনল্যান্ডও। এবার সবাই সংকটের মধ্যে উচ্চাভিলাসী বাজেট কমানোর পক্ষে। ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন বলেছেন, তার সরকার সম্ভাব্য সর্বনিম্ন বাজেটের পক্ষে এবং ঋণ ও অনুদানের মধ্যেও ভারসাম্য চায়।

গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস অবশ্য তাদের মতো ভাবছেন না। তার কথায়, ‘আমরা যদি খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে চাই, তবে আমাদের আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়বে।’

স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘সাড়া প্রদানে আমরা যদি বিলম্ব করি তবে পুনরুদ্ধারও বিলম্বিত হবে এবং সংকটও খারাপ পর্যায়ে যাবে। একটি চুক্তিতে পৌঁছুতে আমাদের সবাইকে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’

অবশ্য কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে থেকেই ব্রেক্সিট, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন নিয়ে বেশ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল ইইউ। এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার চ্যালেঞ্জ।

ইইউয়ের প্রণোদনা প্যাকেজে ইতালি ৮১ দশমিক ৮ বিলিয়ন, স্পেন ৭৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন, ফ্রান্স ৩৯ বিলিয়ন, পোল্যান্ড ৩৮ বিলিয়ন, গ্রিস ৩২ বিলিয়ন, জার্মানি ৩০ বিলিয়ন, রোমানিয়া ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ও পর্তুগাল ১৭ বিলিয়ন ইউরো অনুদান দিচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া