আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, পাল্টা আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তবে পাল্টা আক্রমণের পর পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কথা বলবেন না বলেও জানিয়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বহুল প্রতীক্ষিত এ পাল্টা আক্রমণের কথা বলা হচ্ছিল। বেশ কয়েকটি এলাকায় রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাদের কঠোর অবস্থানের কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে সেটি পাল্টা আক্রমণ কি না, সে বিষয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। অবশেষে শনিবার (১০ জুন) জেলেনস্কি বিষয়টি স্বীকার করলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা পূর্বদিকে বাখমুতের কাছে ও দক্ষিণদিকে জাপোরিঝিয়ার কাছে অগ্রসর হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
তবে এই মুহূর্তে ফ্রন্টলাইনের যুদ্ধের বাস্তবতা মূল্যায়ন করা কঠিন। ইউক্রেন দাবি করছে, তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া বলছে, তারা আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার প্রকাশিত একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী অবশ্যই তাদের পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। তবে ব্যাপক হতাহতের সঙ্গে তাদের অগ্রগতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে আলোচনার পর শনিবার কিয়েভে এক বক্তৃতায় জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্টের কথাকে ‘ইন্টারেস্টিং’ বলে বর্ণনা করেছেন।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে, ভ্রু উঁচিয়ে এবং পুতিন কে তা জানেন না এমন ভঙ্গি করে জেলেনস্কি বলেছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে রাশিয়া বুঝতে পেরেছে যে ‘তাদের আর বেশি দিন বাকি নেই’।
তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডাররা ইতিবাচক মেজাজে আছেন, ‘এটি পুতিনকে বলুন।
ট্রুডো তার এই অঘোষিত সফরে এসে, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে নতুন করে পাঁচ শ’ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দেয়ার ঘোষণা দেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ‘জোটের শর্ত পূরণ করলে’ ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে সমর্থন দেবে কানাডা।
তিনি জানিয়েছেন, জুলাইয়ে লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে ন্যাটো সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোশিয়ায় লড়াই বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রুশ কর্মকর্তারা। ওই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী আজভ সাগরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা রুশ বাহিনীকে বিভক্ত করে দিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ইউক্রেনের এই উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা নোভা কাখভকা বাঁধে বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক বন্যার কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দেশটির দক্ষিণে দিনিপ্রো নদীর উভয় পাশে প্রায় ছয় শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
শনিবারের ভাষণে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত খেরসন এবং মিকোলিভ অঞ্চল থেকে তিন হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
খেরসনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, নদী তীরের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে এবং চার হাজার বসতবাড়ি পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। নোভা কাখভকা বাঁধে ধ্বংসের জন্য ন্যাটো এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে।
শুক্রবার (৯ জুন) রাতে রুশ হামলায় ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওডেসায় তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূপাতিত করা রুশ ড্রোনের টুকরোগুলো কৃষ্ণসাগরের বন্দর সংলগ্ন শহরের একটি আবাসিক ভবনে আছড়ে পড়ে এবং তাতে আগুন ধরে যায়।
জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তিন শিশু সহ ২৭ জন আহত হয়েছে এবং আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তারা বলেন, ভবন থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে পোলতাভার মধ্যাঞ্চলে একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে রাতভর রাশিয়া হামলা চালায়। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী অভিযোগ করেছে, ওডেসা অভিযান ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে এবং তাতে আটটি স্থল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩৫টি ড্রোন ব্যবহার হয়েছে। বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো ২০টি ড্রোন এবং দুটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রে গুলি চালাতে সক্ষম হয়েছে।
ছবিতে দেখা গেছে, ওডেসায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে একটি কক্ষ ধ্বংসাবশেষে ভরে যায়। ঘরটির জানালাও উড়ে গেছে। অন্যরা মাটিতে একটি বড় গর্ত দেখাতে পান।
পোলতাভা মধ্যাঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটিও শনিবার রুশ হামলার শিকার হয়েছে। স্থানীয় গভর্নর বলেছেন যে এতে ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোন হামলাও হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি বিমান ঘাঁটির অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ক্ষতি করেছে।
এদিকে উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলে পৃথক হামলায় ২৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের পর ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়ার সেনারা। কয়েকদিনের মধ্যে তারা দেশটির ২০ শতাংশ অঞ্চল অংশ দখল করে নেয়। এরমধ্যে কিছু জায়গা থেকে রুশ বাহিনী পিছু হটেছে। আরও অঞ্চল দখলমুক্ত করতে এখন বড় পরিসরে হামলা চালানো শুরু করেছে ইউক্রেন। এ জন্য দীর্ঘ সময় প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটি। সূত্র: বিবিসি।