বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট : আগের অবস্থায় ফিরে আসছে জনসমাগম

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪ মাস ১০ দিন। এ মারণ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এলেও বাংলাদেশে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না এখন পর্যন্ত। উল্টো নমুনা পরীক্ষায় কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্তের হার বেড়ে চলেছে দিন দিন। এ অবস্থার মধ্যেও দিব্যি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে মানুষ। অনেকটা আগের অবস্থায় ফিরে আসছে জনসমাগম। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও দেখাচ্ছে ঢিলেমি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়ানক ছোঁয়াচে এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা। আর নিতান্তই যদি বাইরে যেতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের এ পরামর্শ মানছে না অধিকাংশ মানুষ। গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট বলছে, দেশে আগের তুলনায় সবক্ষেত্রেই মানুষের চলাচল বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সহায়তার উদ্দেশ্যে কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের অবস্থানগত তথ্য উন্মুক্ত করেছে গুগল। প্রতিবেদনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে ও পরে ট্রানজিট স্টেশন, খুচরা ব্যবসা, বিনোদনকেন্দ্র, কর্মক্ষেত্র, মুদি দোকান, ফার্মেসি, পার্ক ও বাসাবাড়িতে মানুষের অবস্থানের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এক্ষেত্রে এ বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহের তথ্যকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এর সঙ্গে ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গুগল। এর পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে তারা।

গুগলের প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদন অনুসারে এ বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহের তুলনায় ২৯ মার্চ বাংলাদেশের বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালের মতো ট্রানজিট স্টেশনে মানুষের উপস্থিতি কমেছিল ৬৬ শতাংশ। এরপর ১৭ এপ্রিল এসে স্টেশনে মানুষের উপস্থিতি কমে দাঁড়িয়েছিল ৭২ শতাংশ। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য বলছে, ভিত্তি সময়ের তুলনায় ১২ জুলাইয়ে স্টেশনে মানুষের উপস্থিতি কমেছে ৩৩ শতাংশ।

এর মানে হচ্ছে মার্চ ও এপ্রিলের তুলনায় জুলাইয়ে এসে স্টেশনে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। একইভাবে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি ও সিনেমা হলের মতো খুচরা ব্যবসা ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় মার্চে ৬৮ শতাংশ জনসমাগম কমেছিল, যা এপ্রিলে এসে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। সর্বশেষ ১২ জুলাই রিটেইল ও বিনোদনকেন্দ্রে জনসমাগম কমেছে ৩৪ শতাংশ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও) ড. এএসএম আলমগীর বলেন, মে মাসের পর থেকেই সরকার সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের চলাচল আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলা হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে এখন বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক পরছে। তবে যারা বাইরে যাচ্ছে তারা সবাই যথাযথভাবে হাত জীবাণুমুক্ত করতে পারছেন কিনা সেটি দেখতে হবে।

অনেকেরই স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো আর্থিক সক্ষমতা নাও থাকতে পারে। এ কারণে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা শহরের কথাই ধরি, এখানে যদি নির্ধারিত দূরত্বে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেটি সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কোরবানির ঈদকে ঘিরে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানা সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আবার অনেকেই ঈদের সময় বাড়ি যাবে, সেক্ষেত্রেও সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে কর্মক্ষেত্র, দোকানপাট ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোয়ও আগের চেয়ে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গুগলের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি কমেছিল ৬০ শতাংশ। আর এপ্রিলে এর হার ছিল ৩৮ শতাংশ।

সর্বশেষ ১২ জুলাই কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি কমেছে ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে মুদি দোকান, ফার্মেসি ও বাজারে মার্চে ৪৬ শতাংশ জনসমাগম কমেছিল এবং এপ্রিলে এটি ছিল ৫৪ শতাংশ। সর্বশেষ এ বছরের ১২ জুলাই এসব স্থানে মানুষের উপস্থিতি কমার হার দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে। পার্ক ও জনসমাগমের জন্য নির্ধারিত উন্মুক্ত স্থানে এ বছরের মার্চে মানুষের চলাচল কমেছিল ২৬ শতাংশ। আর এপ্রিলে এ স্থানগুলোতে মানুষের চলাচলের কমার হার ছিল ৩৬ শতাংশ। সর্বশেষ ১২ জুলাই পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মানুষের চলাচল কমেছে ২২ শতাংশ।

নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এ বছরের মার্চে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঘরে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছিল ২৪ শতাংশ। তবে এপ্রিলে এটি কিছুটা কমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। সর্বশেষ এ বছরের ১২ জুলাইয়ের তথ্য বলছে, আগের তুলনায় মানুষের ঘরে থাকার হার বেড়েছে ১২ শতাংশ। এর মানে হচ্ছে করোনার সংক্রমণ বাড়া সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে ঘরে থাকার প্রবণতা ক্রমেই কমছে।

কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টের বিষয়ে গুগল বলছে, তারা মানুষকে কোনো স্টোর বা পরিষেবা বন্ধ কিংবা খোলার বিষয়ে প্রতিনিয়ত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছে। ট্রানজিট স্টেশন, খুচরা ব্যবসা, বিনোদনকেন্দ্র, কর্মক্ষেত্র, মুদি দোকান, ফার্মেসি ও পার্কের মতো পরিষেবার ক্ষেত্রে এ বছরের মে মাসের আগে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলোতে ১১ থেকে ১৮ এপ্রিলের পর থেকে ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এ সময়ে কোথাও আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে, আবার কোথাও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নাগরিকদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঈদের সময়ে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কণক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, ৩১ মের পর থেকে সবকিছু সীমিত পরিসরে চালুর অনুমতি দেয়ার পর জনসমাগম বেড়ে গেছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই এতে ঝুঁকিও বেড়েছে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। পাশাপাশি আমাদের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। কিন্তু কিছুদিন ধরেই আমরা দেখছি পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। যদি বাড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে আগের মতো প্রতিদিন যাতে ১৮ থেকে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের চলাচল বেড়ে যাবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোরভাবে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া