নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে চায় বিএনপি। তাই তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবয়াদুল কাদের বলেন, ৭৫ আর ২০২৩ এক নয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সারাদেশে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে দুইদিন চলে গেলেও মির্জা ফখরুল একটা কথাও বলেননি। সিনিয়র কোনো নেতাও কথা বললেন না। এতে প্রমাণ হয় এটা শুধু আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য নয়, এটা বিএনপির বক্তব্য।
মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমি অবাক হলাম, বাংলাদেশের মানুষ অবাক হলো, হুমকি দেওয়ার পর দুই দিন চলে গেল, মির্জা ফখরুল ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে একটা কথাও বললেন না। সবাই নীরব দর্শক হয়ে আছেন। আমরা সংঘাতে যাব না, কেউ যদি গায়ে পরে আসে আমরা কি চুপ থাকব? আমাদের ওপর যদি আঘাত আসে, আমরা কি পাল্টা আঘাত করব না? এই অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত করতে হবে এবং এটাই আমাদের কাজ।
মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কোনো নেতা যদি খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দিত তখন আপনাদের কি অনুভূতি হত? জানতে চাই আপনার কাছে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা কাল হয়েছে। বিএনপি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। আওয়ামী লীগ কর্মীদের অনুভূতি গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের মানুষ বুঝেছে। ৭৫ আর ২০২৩ এক নয়। বিএনপির এটা অনুধাবন করা উচিত। সারাদেশ গর্জে উঠেছে। শেখ হাসিনার ওপর হামলা হলে কী করবে! আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চুপচাপ বসে থাকবে না।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দিতো, আপনারা কী করতেন কী অনুভূতি হতো?
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নির্বাচন চায় না, তারা চায় সংঘাত, রক্তপাত, অস্থিরতা। নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনে আহবান করা হবে। কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা দেখিয়ে দেয়া হবে।
আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে মোকাবিলা করার হুঁশিয়ারি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কাউকে আক্রমণ করবে না, তবে আক্রান্ত হলে পাল্টা জবাব দেবে। যারা অপরাধ করবে তারা আওয়ামী লীগের হলেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
কাদের বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিজয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না জেনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে বিএনপি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কথায় কথায় আপনারা মাথা গরম করবেন না। ঠান্ডা মাথায় এই অপশক্তিকে বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। যদি কেউ নির্বাচন প্রতিরোধ করতে আসে, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে, জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ করব।
ওবায়দুল কাদের বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান। বলেন, আসুন, দেখুন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কাকে বলে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। সরকার ও সরকারি দলের লোকজন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। ফেয়ার নির্বাচন হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও ফেয়ার হবে। কেউ আসুক আর না আসুক। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন কাকে বলে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি চায় সংঘাত, অস্থিতিশীলতা, অশান্তি ও রক্তপাত। আর আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমরা কারও সঙ্গে সংঘাত, পাল্টাপাল্টি সংঘাতে যাবো না। আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো এই অপশক্তিকে। এই অপশক্তিকে বাংলার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। এজন্য আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। আমাদের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশ সংঘাতে যাওয়া যাবে না। আমরা সংঘাত করবো না, কিন্তু সংঘাত আসলে চুপ করে বসে থাকবো? কেউ যদি গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে চুপচাপ থাকবো? আঘাত এলে পাল্টা আঘাত দেবো না?
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। এতে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।