Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫ গাছ দেনমোহরে ধুমধামের বিয়ে

নাটোর জেলা প্রতিনিধি : 

বর্তমানে বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে দ্বন্দ্ব যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেনমোহরের টাকার পরিমাণ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের বিরোধে অনেকের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। সেখানে নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার নয়, দেনমোহর হিসেবে ৫টি গাছ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন নাটোরের মেয়ে সুকৃতি আদিত্য। প্রতীকী নয় কাবিননামাতেও দেনমোহরের উল্লেখ করা হয়েছে ৫টি গাছের আর্থিক মূল্য ৩০১ টাকা।

ব্যতিক্রমী এমন দেনমোহর গ্রহণ করে প্রশংসায় ভাসছেন কনে সুকৃতি আদিত্য। পরিবারের লোকজন তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মেনে নিয়েছেন।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) নাটোরের উত্তরা গণভবন এলাকায় উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এমন একটি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে নাটোরের বাসিন্দা এম. আসলাম লিটনের একমাত্র মেয়ে সুকৃতির সঙ্গে কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন আদনান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ৬ বছর ধরে পরিচয় পরে দু’পারিবারের সম্মতি নিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই দম্পতি।

কনে সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বর নাবিন একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন।

জানা গেছে, কনে সুকৃতি ও তার বাবা-মায়ের গাছের প্রতি রয়েছে অগাদ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা থেকেই তাদের মিলিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন গাছ। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ৫টি ফলজ ও বনজ গাছ হস্তান্তর করে বরপক্ষ। সেই দিনই সুকৃতি আদিত্য ও বর নাবিন আদনান গাছের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন।

এ ঘটনায় প্রথমে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগত বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেও পরে সবাই এই নব দম্পতিকে প্রসংশায় ভাসিয়েছেন।

জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে অবাক হয়েছেন গুলজান বেগম। তিনি বলেন, জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখেননি। মোহরানা হিসেবে মাত্র পাঁচটি গাছ নেওয়ায় খুব অবাক হয়েছি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে খুবই ভালো লেগেছে।

কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। আমি মনে করি বিয়েতে আর্থিক লেনদেন নয় মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। প্রকৃতি ও পরিবেশের উপকারে আসে এমন কিছু চিন্তা করে দেনমোহর হিসেবে গাছ নিয়েছি। তিনি বলেন, লাগানো এই গাছ প্রকৃতিকে সুস্থ রাখবে, সেই সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ থাকবে।

স্ত্রীর এমন ভিন্ন চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে বর নাবিন আদনান বলেন, দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা আমরা নিরাপত্তা মনে করে থাকি। আসলে প্রকৃত নিরাপত্তা মনের চাওয়া-পাওয়া থেকে আসে। মোহরানা হিসেবে গাছ দেওয়াকে প্রতীকী ব্যাপার হিসেবে আমরা চর্চা করলাম। যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।

কনের বাবা এম. আসলাম লিটন জানান, আমার মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিন্ধান্ত নেয় সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসাবে তার সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মোহরানাটা মূল বিষয় নয়, সম্পর্কটা মূল। দু’টি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধনটাই আসল। কোনো অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবন্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই জায়গাটা আমার মেয়ে আদিত্য অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে তিনি গর্বিত আমার মেয়ের জন্য। তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

সমাজকর্মী শেখ রিফাদ মাহমুদ বলেন, দেনমোহরে সবসময় কনেদের বা কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা-চেতানা অবশ্যই প্রসংসার দাবি রাখে। সেই সঙ্গে সমাজে বিয়ে নিয়ে চলমান অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধেও এই উদ্যোগ সাড়া ফেলবে বলে মনে করি।

আর বিয়ে পড়ানো কাজি মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসলামে ধর্মে বিয়েতে গাছ দেনমোহর দেওয়াতে নিষেধাজ্ঞা নেই। দেনমোহর হচ্ছে কনের হক, কনের সন্তুষ্টি। কনের দাবি আর বরের সামর্থ্য মিলে গেলে সেটাই আসল দেনমোহর।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

৫ গাছ দেনমোহরে ধুমধামের বিয়ে

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

নাটোর জেলা প্রতিনিধি : 

বর্তমানে বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে দ্বন্দ্ব যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেনমোহরের টাকার পরিমাণ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের বিরোধে অনেকের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। সেখানে নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার নয়, দেনমোহর হিসেবে ৫টি গাছ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন নাটোরের মেয়ে সুকৃতি আদিত্য। প্রতীকী নয় কাবিননামাতেও দেনমোহরের উল্লেখ করা হয়েছে ৫টি গাছের আর্থিক মূল্য ৩০১ টাকা।

ব্যতিক্রমী এমন দেনমোহর গ্রহণ করে প্রশংসায় ভাসছেন কনে সুকৃতি আদিত্য। পরিবারের লোকজন তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মেনে নিয়েছেন।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) নাটোরের উত্তরা গণভবন এলাকায় উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এমন একটি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে নাটোরের বাসিন্দা এম. আসলাম লিটনের একমাত্র মেয়ে সুকৃতির সঙ্গে কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন আদনান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ৬ বছর ধরে পরিচয় পরে দু’পারিবারের সম্মতি নিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই দম্পতি।

কনে সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বর নাবিন একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন।

জানা গেছে, কনে সুকৃতি ও তার বাবা-মায়ের গাছের প্রতি রয়েছে অগাদ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা থেকেই তাদের মিলিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন গাছ। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ৫টি ফলজ ও বনজ গাছ হস্তান্তর করে বরপক্ষ। সেই দিনই সুকৃতি আদিত্য ও বর নাবিন আদনান গাছের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন।

এ ঘটনায় প্রথমে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগত বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেও পরে সবাই এই নব দম্পতিকে প্রসংশায় ভাসিয়েছেন।

জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে অবাক হয়েছেন গুলজান বেগম। তিনি বলেন, জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখেননি। মোহরানা হিসেবে মাত্র পাঁচটি গাছ নেওয়ায় খুব অবাক হয়েছি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে খুবই ভালো লেগেছে।

কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। আমি মনে করি বিয়েতে আর্থিক লেনদেন নয় মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। প্রকৃতি ও পরিবেশের উপকারে আসে এমন কিছু চিন্তা করে দেনমোহর হিসেবে গাছ নিয়েছি। তিনি বলেন, লাগানো এই গাছ প্রকৃতিকে সুস্থ রাখবে, সেই সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ থাকবে।

স্ত্রীর এমন ভিন্ন চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে বর নাবিন আদনান বলেন, দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা আমরা নিরাপত্তা মনে করে থাকি। আসলে প্রকৃত নিরাপত্তা মনের চাওয়া-পাওয়া থেকে আসে। মোহরানা হিসেবে গাছ দেওয়াকে প্রতীকী ব্যাপার হিসেবে আমরা চর্চা করলাম। যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।

কনের বাবা এম. আসলাম লিটন জানান, আমার মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিন্ধান্ত নেয় সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসাবে তার সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মোহরানাটা মূল বিষয় নয়, সম্পর্কটা মূল। দু’টি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধনটাই আসল। কোনো অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবন্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই জায়গাটা আমার মেয়ে আদিত্য অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে তিনি গর্বিত আমার মেয়ের জন্য। তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

সমাজকর্মী শেখ রিফাদ মাহমুদ বলেন, দেনমোহরে সবসময় কনেদের বা কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা-চেতানা অবশ্যই প্রসংসার দাবি রাখে। সেই সঙ্গে সমাজে বিয়ে নিয়ে চলমান অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধেও এই উদ্যোগ সাড়া ফেলবে বলে মনে করি।

আর বিয়ে পড়ানো কাজি মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসলামে ধর্মে বিয়েতে গাছ দেনমোহর দেওয়াতে নিষেধাজ্ঞা নেই। দেনমোহর হচ্ছে কনের হক, কনের সন্তুষ্টি। কনের দাবি আর বরের সামর্থ্য মিলে গেলে সেটাই আসল দেনমোহর।