নিজস্ব প্রতিবেদক :
অনুমতি নিয়ে (ওয়ার্ক পারমিট) ১১৫টি দেশের ২০ হাজার ৯৮৮ জন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন বলে সংসদকে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তর পর্বে নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা উন্নয়ন প্রকল্প, শিল্পকারখানা, এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে ৬ হাজার ৭৫ জন চীনা, ৫ হাজার ৮৭৬ জন ভারতীয়, ২ হাজার ৪৬৮ জন রাশিয়ান, এক হাজার ২৪৬ জন শ্রীলঙ্কান, ৯২৪ জন দক্ষিণ কোরিয়ান, ৫৫৭ জন জাপানি, ৪১৬ জন পাকিস্তানি, ৪৬০ জন ফিলিপিনি, ৩৯৯ জন থাই, ৩৭৮ জন বেলারুশিয়ান, ২৬৯ জন কাজাকস্থানি, ১৬৮ জন আমেরিকান, ১৩৯ জন কোরিয়ান, ১২৩ জন মালায়েশিয়ান, ১০৮ জন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক রয়েছেন। তারা ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান এক শ্রেণির বিপথগামী শিশু-কিশোরের মধ্যে গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওই সকল শিশু-কিশোরদের গ্যাং কালচারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করে সুস্থ ও সুন্দর জীবন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া অপরাধ-প্রবণ ও বিপথগামী শিশু-কিশোরদের চিহ্নিত করে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে যথোপযুক্ত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, স্থানীয়ভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে সক্রিয় কিশোর গ্যাংগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে তাদের নিবৃত্ত করার কার্যক্রম চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সভা-সমাবেশের আয়োজন করেন।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক থেকে রক্ষার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থা ২০২২ সালে এক লাখ ৩১১টি মামলা দায়ের ও এক লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জনকে অবৈধভাবে মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০-কে যুগোপযোগী করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) প্রণয়ন করা হয়। এ আইনে মাদক অপরাধের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তাছাড়া মাদক ব্যবসার মূল হোতা ও গডফাদারদের যথাযথ শাস্তি বিধান করে এ আইনে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের বিধানটি সংযুক্ত করা হয়। শুধু মাদক কারবারিই নয় এ আইনে মাদক অপরাধের পৃষ্ঠপোষক, প্ররোচনাদানকারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের যথাযথ প্রয়োগে সর্বমহল সোচ্চার হলে সমাজে মাদক অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতেও বাস্তবতার নিরিখে আইনটি সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।