Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে নাফ নদের মোহনায় মাছ শিকারের সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে দুই দিন পর ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দুটি নৌকায় বিজিবির মাধ্যমে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে জেলেরা ফেরত আসেন। পরে ফেরত আসা জেলেদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকাসহ জাল ফেরত দেয়নি।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেরত আসা জেলেরা হলেন- টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের আলী আহমদের ছেলে শাহ আলম (২৮), শফি উল্লাহর ছেলে আসমত উল্লাহ (১৮), নুরুল আলমের ছেলে আবদুস শুক্কুর (৩২), মৃত নজু মিয়ার ছেলে আবুল হোছন (৪৫), মৃত নাজির হোছনের ছেলে আয়ুব খান (৪৮), মৃত মো. ইউসুফের ছেলে নুর হোছন (৪৫), মৃত বশির আহমদের ছেলে মো. বেলাল (২৯), মৃত নুর আমিনের ছেলে সলিম (৩৫), মৃত জাকারিয়ার ছেলে আবদুল কাদের (২৫), মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মো. হাশিম (৩৫), মো. আলমের ছেলে মো. হোছেন (২৮), ইলিয়াছের ছেলে মহি উদ্দিন (২৬), মো. ইউনুছের ছেলে এনায়েত উল্লাহ (৩০), মৃত মো. ইউনুছের ছেলে নুর হাফেজ (৪০), মৃত মছন আলীর ছেলে মো. ইয়াছিন (৩৫), আমির সাদুর ছেলে আবদু রহিম (৪৪), মৃত বাচা মিয়ার ছেলে হাছান আলী (৫৩), আবদু শুক্কুরের ছেলে ওসমান গণি (৩০), মহেশখালী উপজেলার নাছির উদ্দিনের ছেলে ইন্নামিন (২৭) এবং উখিয়া উপজেলার হাছন শরীফের ছেলে আবদু শুক্কুর (৪৬)।

বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ট্রলারঘাট এলাকা থেকে ২০ জন বাংলাদেশি জেলে ১৫টি হস্তচালিত এবং ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মাছ ধরার উদ্দেশে বঙ্গোপসাগরে যায়। জেলেরা মাছ ধরতে ধরতে ভুলবশত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়া নামক স্থানে ঢুকে পড়ে। এ সময় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকাসহ ২০ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজিবির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে ২০ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত আনা হলো।

তিনি বলেন, ২০ বাংলাদেশি নাগরিককে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফেরত আসা জেলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, দুইটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরে ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চোখে কাপড় বেঁধে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তখন তারা শর্ত বেঁধে দিয়ে টিপ সই নেন। এবার নাকি আমাদের ক্ষমা করে দিছে, যদি আরেকবার ধরতে পারে বাংলাদেশে আর ব্যাক দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। যদি নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করতে হয়, আরকান আর্মি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার থেকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।

ফেরত আসা জেলে আব্দুল করিম বলেন, আজীবন নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করছি। এ বছর আরকান আর্মি বাধা সৃষ্টি করতেছে। যুগ যুগ ধরে আমাদের বাপ-দাদারা সে স্থানে মাছ শিকার করে আসছিল। সে সূত্র ধরেই আমরা সেখানে মাছ শিকারে যাই।

তিনি বলন, মিয়ানমার দুই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের নাইক্ষ্যংদিয়াই জায়গায় তারা দখল করতে চাই। তাই সে জায়গায় তারা মাছ শিকার না করতে অনুরোধ জানিয়েছে। মাছ শিকার করলে কঠোর শাস্তি দেবে বলছে।

এ বিষয়ে নৌকার মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, নাফ নদে মাছ শিকারের সময় নৌকাসহ ২০ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। অবশেষে বিজিবির প্রচেষ্টায় দুই দিন পর জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকা আর জালগুলো ফেরত দেয়নি। তাছাড়া নাফ নদেতে এ ধরনের ঘটনায় বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আবহাওয়া

ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে, রাহুমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ : তারেক রহমান

২০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি

প্রকাশের সময় : ১০:২০:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে নাফ নদের মোহনায় মাছ শিকারের সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে দুই দিন পর ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দুটি নৌকায় বিজিবির মাধ্যমে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে জেলেরা ফেরত আসেন। পরে ফেরত আসা জেলেদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকাসহ জাল ফেরত দেয়নি।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেরত আসা জেলেরা হলেন- টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের আলী আহমদের ছেলে শাহ আলম (২৮), শফি উল্লাহর ছেলে আসমত উল্লাহ (১৮), নুরুল আলমের ছেলে আবদুস শুক্কুর (৩২), মৃত নজু মিয়ার ছেলে আবুল হোছন (৪৫), মৃত নাজির হোছনের ছেলে আয়ুব খান (৪৮), মৃত মো. ইউসুফের ছেলে নুর হোছন (৪৫), মৃত বশির আহমদের ছেলে মো. বেলাল (২৯), মৃত নুর আমিনের ছেলে সলিম (৩৫), মৃত জাকারিয়ার ছেলে আবদুল কাদের (২৫), মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মো. হাশিম (৩৫), মো. আলমের ছেলে মো. হোছেন (২৮), ইলিয়াছের ছেলে মহি উদ্দিন (২৬), মো. ইউনুছের ছেলে এনায়েত উল্লাহ (৩০), মৃত মো. ইউনুছের ছেলে নুর হাফেজ (৪০), মৃত মছন আলীর ছেলে মো. ইয়াছিন (৩৫), আমির সাদুর ছেলে আবদু রহিম (৪৪), মৃত বাচা মিয়ার ছেলে হাছান আলী (৫৩), আবদু শুক্কুরের ছেলে ওসমান গণি (৩০), মহেশখালী উপজেলার নাছির উদ্দিনের ছেলে ইন্নামিন (২৭) এবং উখিয়া উপজেলার হাছন শরীফের ছেলে আবদু শুক্কুর (৪৬)।

বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ট্রলারঘাট এলাকা থেকে ২০ জন বাংলাদেশি জেলে ১৫টি হস্তচালিত এবং ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মাছ ধরার উদ্দেশে বঙ্গোপসাগরে যায়। জেলেরা মাছ ধরতে ধরতে ভুলবশত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়া নামক স্থানে ঢুকে পড়ে। এ সময় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকাসহ ২০ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজিবির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে ২০ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত আনা হলো।

তিনি বলেন, ২০ বাংলাদেশি নাগরিককে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফেরত আসা জেলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, দুইটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরে ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চোখে কাপড় বেঁধে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তখন তারা শর্ত বেঁধে দিয়ে টিপ সই নেন। এবার নাকি আমাদের ক্ষমা করে দিছে, যদি আরেকবার ধরতে পারে বাংলাদেশে আর ব্যাক দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। যদি নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করতে হয়, আরকান আর্মি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার থেকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।

ফেরত আসা জেলে আব্দুল করিম বলেন, আজীবন নাইক্ষ্যংদিয়াই মাছ শিকার করছি। এ বছর আরকান আর্মি বাধা সৃষ্টি করতেছে। যুগ যুগ ধরে আমাদের বাপ-দাদারা সে স্থানে মাছ শিকার করে আসছিল। সে সূত্র ধরেই আমরা সেখানে মাছ শিকারে যাই।

তিনি বলন, মিয়ানমার দুই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের নাইক্ষ্যংদিয়াই জায়গায় তারা দখল করতে চাই। তাই সে জায়গায় তারা মাছ শিকার না করতে অনুরোধ জানিয়েছে। মাছ শিকার করলে কঠোর শাস্তি দেবে বলছে।

এ বিষয়ে নৌকার মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, নাফ নদে মাছ শিকারের সময় নৌকাসহ ২০ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। অবশেষে বিজিবির প্রচেষ্টায় দুই দিন পর জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে। তবে জেলেদের ব্যবহৃত ১৭টি নৌকা আর জালগুলো ফেরত দেয়নি। তাছাড়া নাফ নদেতে এ ধরনের ঘটনায় বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।