Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২ বছর ধরে ভেঙে আছে সেতু, ঝুঁকি নিয়েই চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নড়াইল ও মাগুরার সংযোগ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঝামারঘোপ সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙে গেছে প্রায় দুই বছর আগেই। তার পরও নড়াইল-মাগুরা দুই জেলার সীমানায় গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্ক আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। বড় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা থাকলেও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মধ্যেই জমির ধান নেওয়া, সাধারণ পথচারীদের চলাচল আর স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করছে এলাকাবাসী। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বা ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গা জুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভিতরের রড বের হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয় লোকেরা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক,ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত হয় ১৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট্ট এই সেতুটি। সম্প্রতি স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ঘুরে দেখে ছবি তুলে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে। এটি সংস্কারের অযোগ্য হওয়ায় ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে হবে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গাজুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয়রা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন। নসিমন আর ভটভটি চললেই কাঁপতে থাকে সেতুটি, তবুও বাধ্য হয়েই চলছে পারাপার। সেতুর তলদেশের অবস্থা আরও করুণ। ইটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচের দুটো গার্ডারের একটি ধসে একদিকে হেলে পড়েছে। পিলারের ইটগুলো খুলে সেখানে পাখির বাসা তৈরি হয়ে তাও খসে পড়ছে।

স্থানীয় কৃষক রহমত আলী জানান, একপাশের জমির ধান কেটে ঘোড়ারগাড়ি করে বাড়িতে নিতে হয়। প্রতিদিনই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। ভয় লাগে কখন জানি ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে যাই, তবুও মৃত্যুঝুঁকি জেনেও যেতে হয়।

খলিশাখালি গ্রামের ব্যবসায়ী আকবর মৃধা বলেন, এই সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে আমাদের মিঠুাপর হাটে যেতে গেলে নোহাটা ঘুরে আট কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আমাদের এই দুর্দশা কেউ দেখে না।

স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমরা নিজেরাই চলাচলের জন্য সেতুর ভাঙা জায়গায় কাঠ দিয়েছি। বিষয়টি চেয়ারম্যান ও এলাকার বড় নেতাদের জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ঝামারঘোপ গ্রামের খলিশাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বিল্টু দাস বলে, আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় ভ্যান যেতে চায় না। তখন হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।

জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ রাখেন না এমন প্রশ্নের জবাবে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিকদার হান্নান রুনু বলেন, সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরাতো সবাইকে জানিয়েছি। আর সরকারি কাজ তো কচ্ছপগতিতে চলে।

সেতুর ঝুঁকির কথা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মো. জসীম বলেন, আমরা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদায় ধান মৌসুম পর্যন্ত রাখা হবে। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে নতুন ব্রিজ হতে সময় লাগবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

২ বছর ধরে ভেঙে আছে সেতু, ঝুঁকি নিয়েই চলাচল

প্রকাশের সময় : ০১:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নড়াইল ও মাগুরার সংযোগ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঝামারঘোপ সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙে গেছে প্রায় দুই বছর আগেই। তার পরও নড়াইল-মাগুরা দুই জেলার সীমানায় গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্ক আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। বড় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা থাকলেও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মধ্যেই জমির ধান নেওয়া, সাধারণ পথচারীদের চলাচল আর স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করছে এলাকাবাসী। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বা ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গা জুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভিতরের রড বের হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয় লোকেরা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক,ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত হয় ১৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট্ট এই সেতুটি। সম্প্রতি স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ঘুরে দেখে ছবি তুলে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে। এটি সংস্কারের অযোগ্য হওয়ায় ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে হবে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গাজুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয়রা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন। নসিমন আর ভটভটি চললেই কাঁপতে থাকে সেতুটি, তবুও বাধ্য হয়েই চলছে পারাপার। সেতুর তলদেশের অবস্থা আরও করুণ। ইটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচের দুটো গার্ডারের একটি ধসে একদিকে হেলে পড়েছে। পিলারের ইটগুলো খুলে সেখানে পাখির বাসা তৈরি হয়ে তাও খসে পড়ছে।

স্থানীয় কৃষক রহমত আলী জানান, একপাশের জমির ধান কেটে ঘোড়ারগাড়ি করে বাড়িতে নিতে হয়। প্রতিদিনই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। ভয় লাগে কখন জানি ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে যাই, তবুও মৃত্যুঝুঁকি জেনেও যেতে হয়।

খলিশাখালি গ্রামের ব্যবসায়ী আকবর মৃধা বলেন, এই সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে আমাদের মিঠুাপর হাটে যেতে গেলে নোহাটা ঘুরে আট কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আমাদের এই দুর্দশা কেউ দেখে না।

স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমরা নিজেরাই চলাচলের জন্য সেতুর ভাঙা জায়গায় কাঠ দিয়েছি। বিষয়টি চেয়ারম্যান ও এলাকার বড় নেতাদের জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ঝামারঘোপ গ্রামের খলিশাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বিল্টু দাস বলে, আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় ভ্যান যেতে চায় না। তখন হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।

জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ রাখেন না এমন প্রশ্নের জবাবে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিকদার হান্নান রুনু বলেন, সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরাতো সবাইকে জানিয়েছি। আর সরকারি কাজ তো কচ্ছপগতিতে চলে।

সেতুর ঝুঁকির কথা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মো. জসীম বলেন, আমরা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদায় ধান মৌসুম পর্যন্ত রাখা হবে। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে নতুন ব্রিজ হতে সময় লাগবে।