Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৭ বছর পর বাংলাদেশে ইতিহাসের সুন্দর নির্বাচন হবে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৭ বছর পর বাংলাদেশে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত নীতি সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি; যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। ঘোষিত সময়টি (আগামী বছরের এপ্রিল) নির্বাচনের সঠিক সময়। ভোটের জন্য প্রস্তুত দেশের জনগণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেবল একটি নতুন সরকার নির্বাচনের জন্য রক্ত দেয়নি তরুণরা।

নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা।

আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা জুলাই সনদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

ওই সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচিত সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, সেখানে আপনার অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কি না।

জবাবে দুই হাত নেড়ে হাস্যোজ্জ্বল ড. ইউনূস বলতে থাকেন, নো ওয়ে, নো ওয়ে (একদমই না)। আমার মনে হয় আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যই এমনটা করবেন না। আমাদের দায়িত্ব হলো, ট্রানজিশনটা (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) ভালোভাবে সম্পন্ন করা এবং জনগণকে খুশি করা। … নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা নির্বাচনটা যথাযথভাবে করা নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ বিষয়। যদি নির্বাচন ভুল হয়, তাহলে এই বিষয়টার আর সমাধান হবে না…।

দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি থাকবে।

ড. ইউনূস বলেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মানুষ উৎসব করেছে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটি বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। বিচার কার্যক্রম নির্বাচিত সরকারের সময়ও চলতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচারের দায়িত্ব জনগণই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি তরুণদের হত্যা, গুম এবং অর্থ চুরি করতে পারে। তাই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আপনি কি এখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলবেন? তাহলে, এটি একটি বিতর্কিত বিচার নয়।’

তিনি বলেন, তারা মনে করেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন (আওয়ামী লীগ) তাদের কেউই ভুল স্বীকার করেননি বরং তারা জনগণকে উত্তেজিত করছেন।

 

জাতি আপাতত দেশের নিরাপত্তা ও রাজনীতির সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা কেবল এটাই করেছি।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে গণমাধ্যম কখনো এত স্বাধীনতা ভোগ করেনি।

আরেক সাংবাদিক ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি’ ‘সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা’ এবং ‘প্রশাসনের নীরবতা’ ও কিছু দল বা ব্যক্তির জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক বিষয় ও প্রশ্ন একসঙ্গে এসেছে এবং তারা সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। ‘এটা এমন এক সময় ছিল, যা আমরা অতিবাহিত করেছি। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল এবং এখন বিষয়গুলো শৃঙ্খলায় এসেছে। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য একটি বড় কাজ ছিল।’

সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আগে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ‘মাধ্যম’ প্রয়োজন হতো। যার মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতো। এখন সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে সবাই সহজেই সেবা নিতে পারেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ড. ইউনূস বলেন, সাত বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ মাস থেকে শুরু করে ৫ বা ৭ বছর বয়সীও ছিল, তারা সবাই এখন যুবক বা কিশোর। মার্কিন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচীতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন তাদের ভরনপোষণ কারা দেবে? তাদের তো থাকার নির্দিষ্ট সময়ও নেই। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।

এ সময় নারীদের অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

১৭ বছর পর বাংলাদেশে ইতিহাসের সুন্দর নির্বাচন হবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৭ বছর পর বাংলাদেশে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত নীতি সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি; যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। ঘোষিত সময়টি (আগামী বছরের এপ্রিল) নির্বাচনের সঠিক সময়। ভোটের জন্য প্রস্তুত দেশের জনগণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেবল একটি নতুন সরকার নির্বাচনের জন্য রক্ত দেয়নি তরুণরা।

নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা।

আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা জুলাই সনদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

ওই সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচিত সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, সেখানে আপনার অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কি না।

জবাবে দুই হাত নেড়ে হাস্যোজ্জ্বল ড. ইউনূস বলতে থাকেন, নো ওয়ে, নো ওয়ে (একদমই না)। আমার মনে হয় আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যই এমনটা করবেন না। আমাদের দায়িত্ব হলো, ট্রানজিশনটা (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) ভালোভাবে সম্পন্ন করা এবং জনগণকে খুশি করা। … নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা নির্বাচনটা যথাযথভাবে করা নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ বিষয়। যদি নির্বাচন ভুল হয়, তাহলে এই বিষয়টার আর সমাধান হবে না…।

দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি থাকবে।

ড. ইউনূস বলেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মানুষ উৎসব করেছে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটি বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। বিচার কার্যক্রম নির্বাচিত সরকারের সময়ও চলতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচারের দায়িত্ব জনগণই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি তরুণদের হত্যা, গুম এবং অর্থ চুরি করতে পারে। তাই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আপনি কি এখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলবেন? তাহলে, এটি একটি বিতর্কিত বিচার নয়।’

তিনি বলেন, তারা মনে করেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন (আওয়ামী লীগ) তাদের কেউই ভুল স্বীকার করেননি বরং তারা জনগণকে উত্তেজিত করছেন।

 

জাতি আপাতত দেশের নিরাপত্তা ও রাজনীতির সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা কেবল এটাই করেছি।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে গণমাধ্যম কখনো এত স্বাধীনতা ভোগ করেনি।

আরেক সাংবাদিক ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি’ ‘সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা’ এবং ‘প্রশাসনের নীরবতা’ ও কিছু দল বা ব্যক্তির জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক বিষয় ও প্রশ্ন একসঙ্গে এসেছে এবং তারা সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। ‘এটা এমন এক সময় ছিল, যা আমরা অতিবাহিত করেছি। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল এবং এখন বিষয়গুলো শৃঙ্খলায় এসেছে। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য একটি বড় কাজ ছিল।’

সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আগে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ‘মাধ্যম’ প্রয়োজন হতো। যার মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতো। এখন সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে সবাই সহজেই সেবা নিতে পারেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ড. ইউনূস বলেন, সাত বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ মাস থেকে শুরু করে ৫ বা ৭ বছর বয়সীও ছিল, তারা সবাই এখন যুবক বা কিশোর। মার্কিন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচীতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন তাদের ভরনপোষণ কারা দেবে? তাদের তো থাকার নির্দিষ্ট সময়ও নেই। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।

এ সময় নারীদের অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।