নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেওয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যই এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ এ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে এলেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সাজ্জাত আলী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহাড়া দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যান্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।
ঢাকাবাসীর জন্য সেবক হিসাবে কাজ করতে চান বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ বা জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। যেখানে আগে জিডি হবার ৪৮/৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ অফিসাররা সাড়া দিত। এখন সেখানে এক ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগকারীরর কাছে হাজির হয়ে অভিযোগ শুনবেন। গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন পুলিশ অফিসাররা।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আমি একজন সেবক। আমি রেভিনিউ, ট্যাক্স কালেক্টর না। আমার কাজ জনগণকে সেবা দেওয়া। তেজগাঁও থানায় ৫০০ মামলা হোক সমস্যা নেই। সেজন্য আমি কমিশনার জবাবদিহি করবো। কেন ৫০০ মামলা হলো। সেটার জবাব আমি দিবো। মামলা হোক, জিডি হোক সমস্যা নাই কিন্তু কোনো ঘটনা যেন হাইড না থাকে। যে ঘটনায় মামলা হবার কথা সেটার জন্য মামলাই নিতে হবে, যেটার জন্য জিডি নেবার কথা সেটার জিডিই হতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকাবাসীকে দ্রুত সেবার দেওয়া জন্য প্রতিটি থানা এলাকায় আমরা নতুন একটি টিম গঠনে কাজ করছি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হবে। সেজন্য নতুন লোক প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের থানায় থানায় পাঠানো হবে। আমি চাই সেবা প্রদানে রেসপন্স টাইম কমে নিয়ে আসা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশী সহায়তা পাবেন। আগে জিডি হবার পরে ৪৮/৭২ ঘণ্টা পর তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগ করতো বা ঘটনাস্থলে যেতো। কিন্তু এখন সেসময় পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করতে না হয়, জিডি নথিভুক্ত হবার ১/২ ঘণ্টার মধ্যে অফিসার যেভাবেই হোক ঘটনাস্থলে যাবেন বা অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
শুধু কি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্রাফিকের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে, আপনারা নিত্যদিন এই ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন। উত্তরা থেকে একজন মানুষের মতিঝিলে পৌঁছাতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। একজন মানুষের অফিসে আসতে যেতে যদি ৬-৭ ঘণ্টা লাগে তাহলে তিনি কর্ম করবেন কখন? তিনি তো রাস্তাতেই আছেন। ট্রাফিক যদি ঠিক হয়ে যেতো, তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা আমাদের জিডিপিতে যোগ হতো। এ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে আমাদের কি পরিমাণ জনবল অপচয় হয় অকল্পনীয়। আপনাদের নিত্যদিনের এ ভোগান্তি কমানোর জন্য যত প্রচেষ্টা আমাদের। এমনকি বিদেশ থেকে আসা একজন মেহমানও কি ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কেন আমার এ দেশে বিনিয়োগ করবেন? আমরা শুধু বিনিয়োগ বিনিয়োগ করছি, বিনিয়োগের পরিবেশ তো সৃষ্টি করতে হবে। ট্রাফিক আমাদের শহরের আয়না। তাই এটা আমাদের ফোকাল পয়েন্ট।
সামনে বিজয় দিবস ঘিরে কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজয় দিবসের আগে ১৪ ডিসেম্বর আছে এবং পরে ৩১ ডিসেম্বর আছে। আমরা তিনটি দিবস নিয়েই কাজ করছি। ছোটখাটো হুমকি যদি থাকে এর জন্য তো আমাদের উৎসব থামিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের দিবস উদযাপন হবে এবং আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
ডিএমপিতে ওসিদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, সেই সিন্ডিকেট ভাঙা হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সিন্ডিকেট আর কাজ করবে না। থানার সব ওসি নতুন।
জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময় বিভিন্ন মামলায় নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে এবং মামলা থেকে বাদ দিতে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হয়েছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে আদালতে নির্দেশে। এসব মামলার আসামির সংখ্যা ছিল ২০০ এর বেশি। এখন দেখা যাচ্ছে, সবাই ঘটনায় জড়িত ছিল না। গুটি কয়েক লোক জড়িত ছিল। এখন বাস্তবে যেটা ঘটছে, মামলার বাদী সব আসামির কাছে গিয়ে গিয়ে টাকা চাইছে। এ আসামিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, তাদের আমরা গ্রেপ্তার করবো না। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, আমরা শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এই ২০০ আসামিকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে, যিনি মামলার বাদী হয়েছেন তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ২০০ লোককে আসামি করেছেন, পরবর্তীতে চাঁদাবাজি করবেন বলে। আবার আমার লোক সব যে ভালো তা নয়। আমার লোকেরাও আসামিদের কাছ থেকে নানা ধরনের টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। একজনের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি এ কাজে লিপ্ত ছিলেন। আর যিনি এসব কাজে লিপ্ত হবেন, তার বিরুদ্ধেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।