আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা মঙ্গলবার দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরই তাকে আদালতে তোলা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে সিঙ্গাপুর থেকে নিজস্ব বিমানে ব্যাংকক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন শত শত সমর্থক। দেশে ফেরার পর রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন থাকসিন। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ তাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায়। সেখানে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাজতন্ত্রের প্রতি অনানুগত্যের অভিযোগে ২০০৮ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দু’বছর পর সামরিক বাহিনী তাকে জেলে নিতে চাইলে তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। খবর সিএনএ, বিবিসি।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) নতুন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে পার্লামেন্টের ভোটাভোটি হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে থাকসিন সমর্থিত ফেউ থাই পার্টির নেতৃত্বে সংসদীয় জোটের প্রধান হিসেবে ব্যবসায়ী টাইকুন স্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়া হবে।
থাকসিনের প্রত্যাবর্তনে এক অভিনন্দন বার্তায় স্রেথা টুইটারে লিখেছেন, সিনাওয়াত্রা পরিবার এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে অভিনন্দন। আপনার পরিবারের সাথে আপনার জন্মস্থানে ফিরে আসা, এর চেয়ে বড় সুখের কিছু নেই।
থাকসিন টার্মিনাল ভবন থেকে অল্প সময়ের জন্য বের হয়ে আসেন। তিনি রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের একটি ছবিতে ফুলের মালা পরিয়ে দেন ও মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন করেন। এর পর তিনি সমর্থকদের অভিবাদন জানান।
বিমানবন্দর থেকে থাকসিনকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া কথা রেছে এবং ওয়ারেন্ট জারি করে তাকে জেলে পাঠানো হবে বলে থাই সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া গুলো জানাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ফুটবল দল ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক মালিক থাকসিনকে আদালতে নেওয়ার সময় সড়কের ২ পাশে সমবেত হন লাল শার্ট পরিহিত ভক্তরা।
তার বিরুদ্ধে মোট ১০ বছর কারাদণ্ডের সাজা রয়েছে। তাকে কতদিন কারাগারে থাকতে হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তার সহযোগীরা আশা করছেন, সংক্ষিপ্ত কারাবাসের পর তাকে গৃহবন্দী করা হতে পারে।
আদালতে তাকে ৩টি অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগের আদেশ দেওয়া হয়। থাকসিনের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে সাবেক শিন কর্প প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মামলা এবং ১টি ব্যাংক ঋণ ও ১টি লটারির মামলার বিচারের রায়ে এই শাস্তি দেওয়া হয়।
ফেউ থাই দলের নেতৃত্বে গঠিত জোটের নেতা হিসেবে আজ স্রেথা থাভিসিনের থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার কথা। স্রেথা থাভিসিন দেশটির একজন প্রথম সারির ব্যবসায়ী। উল্লেখ্য, থাই ফেউ দল হচ্ছে থাকসিনের রাজনৈতিক দলের বর্তমান সংস্করণ।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানে ৭৪ বছর বয়সী এই ধনকুবের ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তিনি ১৫ বছর স্বেচ্ছায় নির্বাসনে ছিলেন।
থাকসিন অনেক দিন ধরে বলে আসছেন যে তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে তার বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তার মেয়ে পায়েটংটার্ন সিনাওয়াত্র ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘২২ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আমি আমার বাবা থাকসিন ডন বিমানবন্দরে থাকব।’
থাকসিনের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পিউ থাই দলের প্রার্থীদের একজন। সূত্র : আল-জাজিরা।