নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে আজ। আলোচিত এ হত্যার ইতোমধ্যে ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। ১২ বছরে এসেও তাদের হত্যার বিচার দাবিতে আজও প্রতিবাদ সমাবেশ করতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। তাদের প্রশ্ন কেন এখনও বিচার কাজ শুরু হয়নি? কেন বিচার চেয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার তদন্ত নিয়ে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর কঠোর সমালোচনা এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
সমাবেশে বক্তারা জানান, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পূর্ব রাজবাজারের নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন সাগর-রুনি। ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দিলেও ১২ বছর ধরে ঝুলে আছে হত্যার তদন্ত। ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১০৭ বার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তদন্তে যত দিন সময় লাগে সঠিকভাবে দোষী নির্ণয় করতে, তাদের ততটুকু সময় দিতে হবে। সেটা যদি ৫০ বছর হয়, ৫০ বছর দিতে হবে।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ‘আমরা আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করব না।’
ডিআরইউর সহসভাপতি মো. শামীম বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছ থেকে এমন মন্তব্য আমরা আশা করি না।’
সাগর সরোয়ারের সাবেক সহকর্মী মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘সাগর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তেল-গ্যাস, দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করত। আমরা জানি না তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব রিপোর্টের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যার তদন্ত রিপোর্ট এবং বিচার চাই।’
সাংবাদিকরা বলেন, বছর ঘুরে আবারও সেই ১১ ফেব্রুয়ারি আজ। ২০১২ সালের এদিন ভোরে আমাদের প্রিয় দুই সহকর্মী সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। এবার এই হত্যাকাণ্ডের ১২তম বার্ষিকী। ১১ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু প্রকৃত হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ডিআরইউসহ গোটা সাংবাদিক সমাজ আজও সোচ্চার।
তারা বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে, কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এটার বিচার আমরা পায়নি। বিচার পাওয়া তো দূরের কথা এক যুগে তদন্ত কাজও শেষ হয়নি। বিচার পেতে আরও কত বছর লাগবে আমরা তা ধারণা করতেও পারি না। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যেই দিন তদন্ত শেষে বিচার আমরা পাবো। বিচার পাওয়ার দাবিতে আমরা সব ধরনের আন্দোলন করেছি, কিন্তু কোনো কূল কিনারা পাওয়া যায়নি এখনো। তবুও আমরা অপেক্ষায় থাকতে চাই কিন্তু সাগর-রুনির হত্যার বিচার হতেই হবে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে আজ। এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ এখন পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















