আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আমরা জিতব। আমরা জয়ী হবো। হামাসকে পরাজিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
শনিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটি হবে একটি দীর্ঘ ও কঠিন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তাঁরাই জিতবেন। আমরা লড়ব। আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা সরে আসব না।
নেতানিয়াহু বলেন, ইহুদিদের টিকিয়ে রাখতে এটি তিন হাজার বছরের পুরনো যুদ্ধ। একে “দীর্ঘমেয়াদী ও কঠিন” যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরায়েলি অতিরিক্ত স্থল বাহিনী এখন গাজা উপত্যকার সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করব এবং আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা স্থলে বা আকাশে কোথাও সৈন্য প্রত্যাহার করব না।’ পশ্চিমা দেশ ও আরব বিশ্বের মিত্ররা ইসরায়েলের পাশে আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরায়েলের অতিরিক্ত বাহিনী এখন গাজা উপত্যকার সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান নেতানিয়াহু। তার এমন ঘোষণার পরপরই শনিবার রাতে দক্ষিণ ইসরায়েল থেকে গাজায় একাধিক হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে গাজা শহরকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ লিফলেট ফেলা হয়েছে।
ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস বলছে, গাজা উপত্যকায় শুক্রবার থেকে টেলিফোন লাইন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা বহির্বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। তবে রোববার সকাল থেকে তা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ লড়াইকে ইসরায়েলের দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করব এবং আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা স্থলে বা আকাশে কোথাও সৈন্য প্রত্যাহার করব না। পশ্চিমা দেশ ও আরব বিশ্বের মিত্ররা ইসরায়েলের পাশে আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করেই বলেন, আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করবেন না। আমাদের সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা ভণ্ডামির শামিল। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী।
এদিকে নেতানিয়াহুর ঘোষণার ফলে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা একটি গৌণ উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েল থেকে অপহৃত ২২০ জনেরও বেশি জিম্মির বিনিময়ে হামাস ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল।
হামাস এ পর্যন্ত কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিলেও এখনও বেশিরভাগই তাদের হাতে বন্দি রয়েছে। নেতানিয়াহু হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। জিম্মিদের নিরাপত্তা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরায়েল গাজায় সামরিক হামলা থামাতে পারে, যারা এমনটা আশা করেছিলেন তারা নেতানিয়াহুর ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ।
তবে নেতানিয়াহুর দাবি, জিম্মিদের উদ্ধার করা সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যগুলোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাজাকে ‘শয়তানের আখড়া’ অভিহিত করে তিনি সেখান থেকে জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই যুদ্ধকে তিন স্তরে ভাগ করার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।
গত সপ্তাহে পার্লামেন্ট কমিটিকে তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে পরাজিত ও ধ্বংস করার জন্য তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করা। দ্বিতীয় পর্যায়টিকে ক্রমাগত লড়াই হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরায়েলি সেনারা হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের নির্মূল করার লড়াই চালিয়ে যাবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে ইসরায়েলের নাগরিকদের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখন্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। জবাবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেছ ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বিমান হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।