Dhaka রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাদি হত্যাকাণ্ড : ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, অবশেষে স্বীকার করল ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) হাদির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই কথা স্বীকার করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

হাদির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ওসমান হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। সরকার ইতোমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি নিষ্পত্তি করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এই জঘন্য ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার পর প্রধান আসামি শ্যুটার ফয়সালের বাবা মাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মূল অভিযুক্ত ফয়সালসহ তার সহযাগীকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। তারা ভারতে চলে গেছেন ধারণা করা হচ্ছিল। অবশেষে আজ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কশিমনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতক ফয়সাল করিম ও আলমগীর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে গেছে। ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতে সহায়তাকারীর মধ্যে ভারতীয় দুই নাগরিক পুত্তি ও শামীকে মেঘালয় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের গ্রেফতার করতে আমরা ভারতীয় পুলিশকে পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছি।

‎তিনি বলেন, ওসমান হাদিকে গুলি করার পর রাত ১১টায় আমরা গুলি করা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। ওই সময় তার পাসপোর্টটি দেশের সকল ইমিগ্রেশনে ব্লক করে দিয়েছি। কোনোভাবেই যেন সে দেশত্যাগ করতে না পারে।

হাদি হত্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন-মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ‘ভারতে পালাতে’ সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।

তদন্তে নেমে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স-কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা অজ্ঞাতপরিচয় সহযোগীসহ প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন

হাদি হত্যাকাণ্ড : ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, অবশেষে স্বীকার করল ডিএমপি

প্রকাশের সময় : ০১:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) হাদির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই কথা স্বীকার করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

হাদির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ওসমান হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। সরকার ইতোমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি নিষ্পত্তি করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এই জঘন্য ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার পর প্রধান আসামি শ্যুটার ফয়সালের বাবা মাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মূল অভিযুক্ত ফয়সালসহ তার সহযাগীকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। তারা ভারতে চলে গেছেন ধারণা করা হচ্ছিল। অবশেষে আজ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কশিমনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতক ফয়সাল করিম ও আলমগীর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে গেছে। ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতে সহায়তাকারীর মধ্যে ভারতীয় দুই নাগরিক পুত্তি ও শামীকে মেঘালয় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের গ্রেফতার করতে আমরা ভারতীয় পুলিশকে পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছি।

‎তিনি বলেন, ওসমান হাদিকে গুলি করার পর রাত ১১টায় আমরা গুলি করা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। ওই সময় তার পাসপোর্টটি দেশের সকল ইমিগ্রেশনে ব্লক করে দিয়েছি। কোনোভাবেই যেন সে দেশত্যাগ করতে না পারে।

হাদি হত্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন-মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ‘ভারতে পালাতে’ সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।

তদন্তে নেমে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স-কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা অজ্ঞাতপরিচয় সহযোগীসহ প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।