হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে ভাবি-ভাতিজিসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন মাধবপুর উপজেলার বীরসিংহপাড়ার মৃত সৈয়দ হোসেনের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে তাকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
নিহতরা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহ আলমের ভাবি ও বীরসিংহপাড়ার গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৪৫), মেয়ে শারমিন আক্তার (২৩) ও তাদের প্রতিবেশী আব্দুল আলীমের ছেলে শিমুল মিয়া (২৫)।
আদালতের স্টেনোগ্রাফার মুখলেছুর রহমান জানান, ভাবি ও ভাতিজিসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ড ও তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন।
মামলার আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আমরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করে রায় কার্যকরের দাবি জানাই।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুফি মিয়া বলেন, রায়ে আমরা খুশি না। শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পাওনা টাকা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে শাহ আলম ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় জাহানারা ও শারমিনকে তাদের ঘরে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় আহতদের চিৎকারে শিমুল এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে জাহানারা খাতুন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাকি দু’জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় নিহতের স্বামী দুবাই প্রবাসে ছিলেন বিধায় তার ভগ্নিপতি হাজী মো. মোহন মিয়া একমাত্র আসামি শাহ আলমের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এদিকে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন জানান, তিনি গ্রিস প্রবাসে থাকার সময় জাহানারাকে কয়েক দফা টাকা পাঠান, এছাড়াও পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভে দেশে ফিরে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর মাধবপুর থানা পুলিশ আদালতে অভিযোপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে বিচার চলাকালে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত রায় দিয়েছেন।
নিহত জাহানারা খাতুনের স্বামী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। এখন রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাই। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আফজাল হোসেনও রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন হলে লোকজন এমন অপরাধ করতে ভয় পাবে।