Dhaka বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বামীর সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত ‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে চিরশয্যায় শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।

খালেদা জিয়ার কবরে সবার আগে নামেন বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজ হাতে তিনি তার মাকে কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করেন। এদিন বিকেল সোয়া ৪টায় জিয়া উদ্যানে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে খালেদা জিয়াকে শায়িত করার কাজ শুরু হয়। এসময় তারেক রহমানকে কবরে নেমে যেতে দেখা যায়। মাকে কবরে শায়িত করে বিকেল সাড়ে ৪টার কিছুক্ষণ পর তিনি উঠে আসেন।

এর আগে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য নেওয়া হয় জিয়া উদ্যানে। এ সময় সড়কের দুপাশে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে প্রিয় নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেসময় এলাকাজুড়ে শোক ও নীরবতার আবহ বিরাজ করে।

দাফন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার দাফনের মধ্য দিয়ে এক বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভোগা খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩ নভেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। দেড় মাসের মতো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তিনি মারা যান।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪৩ বছর দলকে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় ‘আপসহীন নেত্রীর’ উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।

চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে কখনো তার বিরোধীদের আক্রমণ করে কথা বলতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলি না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন

স্বামীর সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত ‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ০৫:১০:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে চিরশয্যায় শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।

খালেদা জিয়ার কবরে সবার আগে নামেন বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজ হাতে তিনি তার মাকে কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করেন। এদিন বিকেল সোয়া ৪টায় জিয়া উদ্যানে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে খালেদা জিয়াকে শায়িত করার কাজ শুরু হয়। এসময় তারেক রহমানকে কবরে নেমে যেতে দেখা যায়। মাকে কবরে শায়িত করে বিকেল সাড়ে ৪টার কিছুক্ষণ পর তিনি উঠে আসেন।

এর আগে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য নেওয়া হয় জিয়া উদ্যানে। এ সময় সড়কের দুপাশে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে প্রিয় নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেসময় এলাকাজুড়ে শোক ও নীরবতার আবহ বিরাজ করে।

দাফন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার দাফনের মধ্য দিয়ে এক বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভোগা খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩ নভেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। দেড় মাসের মতো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তিনি মারা যান।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪৩ বছর দলকে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় ‘আপসহীন নেত্রীর’ উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।

চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে কখনো তার বিরোধীদের আক্রমণ করে কথা বলতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলি না।