মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
মুন্সিগঞ্জে স্বামী নাজির হোসেনকে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী নীলা আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১টায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কাজী আব্দুর হান্নান এ রায় ঘোষণা করেন। কোর্ট পুলিশের ইনচার্জ জামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত নীলা আক্তার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয়াগাঁও এলাকার মৃত নাজির হোসেনের স্ত্রী ও জয়নাল আবেদীনের মেয়ে।
মামলা ও কোর্ট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০জুন মুন্সিগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া এলাকা থেকে দুই সন্তানের জনক নাজির হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক কলহের জেরে বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে নাজিরকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী নীলাকে আসামি করে পরদিন ২১জুন মামলা করে নিহতের ভাই মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
ওই ঘটনার দীর্ঘ ৮বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রম শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে আদালত। ৩০২ ধারায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দন্ডপ্রাপ্ত নারী নীলা আক্তার (৪০) মুন্সিগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া এলাকার নিহত নাজির হোসেনের স্ত্রী এবং সদর উপজেলার নয়াগাঁও এলাকার জয়নাল আবেদিনের মেয়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এর আগে স্বামীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারমূলক জবানবন্দি দেন সাজাপ্রাপ্ত নীলা আক্তার। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। তাকে আদেশের দিন আদালতে হাজির করা হয়। পরে আসামীর উপস্থিতিতেই এই আদেশ দেন বিচারক।
নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেনের দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নাজির হোসেনের সঙ্গে আসামি লীলা আক্তারের প্রায় ২৫ বছর আগে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে, এক ছেলে নাইম (১৯) ও নূপুর (১৭) নামের এক মেয়েসহ দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সাংসারিক ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই দম্পতির মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। এর জের ধরে ২০১৫ সালের ২০ জুন রাত ৯টার দিকে নীলা তার স্বামী নাজিরকে মারধর করে। সে কারণে নাজির খাওয়া দাওয়া না করে তার দোচালা টিনের বসত ঘরের পাটাতনে উঠে শুয়ে থাকে। এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নীলা বৈদ্যুতিক তার দিয়ে নাজিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পরে এ ঘটনায় পর দিন নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মুন্সিগঞ্জ আদালতের পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, ঘটনা পর ২০১৫ সালেই নীলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন থেকে তিনি জেল হাজতে ছিলেন। গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন। ৮ বছর পর মামলার সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আসামি নীলা আক্তারকে দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
জরিমানা অনাদয়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তার দণ্ডাদেশ থেকে জেল হাজতে থাকা ৮ বছরের শাস্তি কমানো হতে পারে পরবর্তীতে।
আদালতের রায়ের ব্যাপারে, রাষ্ট্রপক্ষের (সরকারি) বিজ্ঞ কৌশলী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন বলেন, আসামি নিলা আক্তার আগেই আদালতে দোষ স্বীকার করে নিজের জবানবন্দী দিয়েছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়ে আমরা ও নিহতের পরিবার সন্তুষ্ট।
মামলার বাদী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্ত্রীর নীলা বেগমের পরকিয়ার সম্পর্ক নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। তাই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলে মেয়েকে আমি দেখাশোনা করছি। দীর্ঘ বিচার শেষে আজ আদালত উপযুক্ত রায় ঘোষণা করেছে। এই রায়ে আমরা খুশি, অপরাধী তার প্রাপ্য বিচার পাবে।