একে একে আসছে লাশ। ডুকরে কেঁদেই চলেছেন স্বজনরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের পাশেই বালিয়াদিঘী গ্রাম। এশার নামাজের পর এক এক করে লাশগুলো কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছে স্বজন ও এলাকাবাসী। বসবাস, দুর্ঘটনা, জানাজা ও কবরস্থান এক সঙ্গে একই এলাকায়। কাজেও গিয়েছিলেন তারা একসাথেই। বৃহস্পতিবার সকালে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। এখন ফিরছেন লাশ হয়ে।
নিহতের কেউ ছিলেন মৌসুমি শ্রমিক, কেউ নিয়মিত। বাড়ি থেকে ৭৩ কিলোমিটার দূরে গিয়েছিলেন একসাথে শ্রমিক হিসেবে ধান কাটতে। ২২ দিন আগে একই গ্রামের ১৫ জন গিয়েছিলেন। সেই ১৫ জনই একসাথে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ি পৌঁছানোর দুই কিলোমিটার দূরত্বে প্রাণ হারায় বাবা ছেলেসহ আটজন।
ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান মিলু। আটজনের মধ্যে মিলুসহ তিনজনের বিয়েও হয়েছিল কয়েক মাস আগে। তিন অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ হলো বিধবা। নিহত আহাদের ৪ মাসের নববধূ আসমা, মিজানুর রহমান মিলুর নববধূ আমেনা বেগম ও মিঠুনের নব বিবাহিতা স্ত্রী হয়ে গেল বিধবা। একই গ্রামের ওরা আটজনের ভাগের ধান নিয়ে ফিরলেও, ফেরেনি তাদের প্রাণ। জীবনের বিনিময়ে পাওয়া ধানের ‘ভাত’ কিভাবে খাবে স্বজনরা।
আরও পড়ুন : চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানবোঝাই নিষিদ্ধ ভটভটি উল্টে ৯ জন নিহত
এ ঘটনায় বালিয়াদিঘী গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারীতে দেখতে যাওয়া মানুষদের চোখেও নেমে আসে পানি। লাশ কবরস্থানে মরদেহের খাটিয়া নিয়ে যেতে গ্রামের মানুষদের সাথে যোগ দেয় পাশের গ্রামের মানুষ। একই সাথে পাশাপাশি সাতজন চীরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের বারিকবাজার-সোনাপুর ভাঙ্গাসাকো এলাকায় রাস্তার পাশে খাদে পড়ে নসিমন উল্টে যায়। ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই সাতজন ও পরে একজন মারা যান।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহত এমারুল ইসলাম ও আলিম হোসন বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে ধানকাটা শেষে মজুরির ১৫০ মণ ধান নিয়ে নসিমনযোগে চালকসহ আমরা ১৬ জন বাড়ি ফিরছিলাম। আমি ও আরেকজন সামনের সিটে বসে ছিলাম। পথে সোনাপুর গ্রামের ভাঙা রাস্তায় পৌঁছলে বামে সড়কের পাশে গর্তের পানিতে পড়ে উল্টে যায় নসিমনটি। তাতেই সব শেষ।