Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তবে সাবেক এই স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী আগস্টের প্রথম দিকে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, দ্য হিন্দু জানতে পেরেছে— শেখ হাসিনা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন এবং সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে ছিল যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।

এদিকে ভারতীয় এই পত্রিকায় একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দাবি করেছেন, আমরা সে সময়ে গণভবনে উপস্থিত ছিলাম এবং ক্রমাগত এই পরিকল্পনাই করছিলাম যে কীভাবে ছাত্র বিক্ষোভের সমাধান করা যায়। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেছিলেন (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সেই কারণেই লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দাবি করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা চীন সফরে যাওয়ার পর ঢাকার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সর্বাত্মক আন্দোলন তীব্র গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ছাত্ররা যখন “এক দফা দাবি— শেখ হাসিনার পদত্যাগ ’ দাবি করে তখন মহিবুলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করতে বলেছিলেন হাসিনা। পরে অবশ্য ছাত্রবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করলে সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনেই থাকেন।

হাসিনা সরকারের সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

তিনি মনে করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাবলী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সিরিয়া ও ইরাকের মতো ইসলামিক চরমপন্থীদের জন্য বাংলাদেশ যেন নতুন আবাসে পরিণত না হয়, যেগুলো গত এক দশকে ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছিল। হিজবুত তাহরীর এবং জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ-এর মতো ‘চরমপন্থী’ গোষ্ঠীগুলোর সম্প্রসারিত ঘাঁটি সম্পর্কে তিনি সতর্ক করেন।

তিনি গত কয়েক মাস ধরে হিজবুত তাহরীরের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, এই সংগঠনটি ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিল। তাই এই জাতীয় দলগুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। এরা শুধু এই অঞ্চল নয়, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া গুমকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্প্রতি মোট ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টেই হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সকল মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর

স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ১২:০৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তবে সাবেক এই স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী আগস্টের প্রথম দিকে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, দ্য হিন্দু জানতে পেরেছে— শেখ হাসিনা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন এবং সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে ছিল যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।

এদিকে ভারতীয় এই পত্রিকায় একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দাবি করেছেন, আমরা সে সময়ে গণভবনে উপস্থিত ছিলাম এবং ক্রমাগত এই পরিকল্পনাই করছিলাম যে কীভাবে ছাত্র বিক্ষোভের সমাধান করা যায়। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেছিলেন (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সেই কারণেই লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দাবি করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা চীন সফরে যাওয়ার পর ঢাকার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সর্বাত্মক আন্দোলন তীব্র গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ছাত্ররা যখন “এক দফা দাবি— শেখ হাসিনার পদত্যাগ ’ দাবি করে তখন মহিবুলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করতে বলেছিলেন হাসিনা। পরে অবশ্য ছাত্রবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করলে সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনেই থাকেন।

হাসিনা সরকারের সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

তিনি মনে করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাবলী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সিরিয়া ও ইরাকের মতো ইসলামিক চরমপন্থীদের জন্য বাংলাদেশ যেন নতুন আবাসে পরিণত না হয়, যেগুলো গত এক দশকে ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছিল। হিজবুত তাহরীর এবং জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ-এর মতো ‘চরমপন্থী’ গোষ্ঠীগুলোর সম্প্রসারিত ঘাঁটি সম্পর্কে তিনি সতর্ক করেন।

তিনি গত কয়েক মাস ধরে হিজবুত তাহরীরের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, এই সংগঠনটি ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিল। তাই এই জাতীয় দলগুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। এরা শুধু এই অঞ্চল নয়, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া গুমকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্প্রতি মোট ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টেই হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সকল মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়।