নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে। ঘটনার বীভৎসতা এবং সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্ত নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
রোববার (১৩ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিটটি দায়ের করা হয়। রিটে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে— সোহাগ হত্যার ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, হত্যায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, এবং অপরাধীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে স্থল ও বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করার আহ্বান।
আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল অত্যন্ত পৈশাচিক। ভিডিও ফুটেজে যা দেখা গেছে, তা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। সঠিক তদন্ত ছাড়া বিচার সম্ভব নয়। এজন্য নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কমিশন গঠন জরুরি।
তিনি জানান, রিটটি আজ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সোমবার (১৪ জুলাই) শুনানির জন্য এটি কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
এর আগে, গত বুধবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনের সড়কে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে এবং মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যা করে। তিনি কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়িক বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন, নিহত সোহাগের বোন ঢাকার কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এবং আরও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ প্রধান অভিযুক্তসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে রিটকারীর দাবি, এখনও অনেক মূলহোতা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ফলে শুধুমাত্র থানার তদন্তে বিচার নিশ্চিত হবে না এমন আশঙ্কা থেকেই আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।