নাটোর জেলা প্রতিনিধি :
নাটোরের গুরুদাসপুরে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মো. আসাদ আলী (৫৫) নামের এক কৃষককে শিকলবন্দি করার অভিযোগে সুদে ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ হোসেনকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে উপজেলার মশিন্দা বাহাদুরপাড়া থেকে আজিজকে তার বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের মশিন্দা বাহাদুরপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। আহত কৃষকের মো. আসাদ আলী সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার ঈশ্বরপুর গ্রামের মৃত হযরত প্রামাণিকের ছেলে। আবদুল আজিজ একই গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। সুদি ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ তার নিজ বসতবাড়ির বারান্দায় কৃষক আসাদ আলীকে শিকলবন্দি করে রেখে পালিয়ে যায়।
শিকলবন্দি কৃষক আসাদ আলী বলেন, তিন বছর আগে ৮০ হাজার টাকা জমি লিজের ওপর সুদ নিয়েছিলাম আব্দুল আজিজের কাছ থেকে। দুই বছরে ২০ হাজার টাকা সুদ এবং আসল ৩০ হাজারসহ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। বাকি ৫০ হাজার টাকা এ বছর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি দুর্ঘটনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সংসারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে। একটি ছেলে ছিল সে বাড়িতে থাকে না। তার উপার্জনে সংসার চলে। অভাবগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় আব্দুল আজিজের পাওনা বাকি টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছিল। শনিবার সকালে আব্দুল আজিজ ও তার বাবা আফজাল হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। আমি বাড়িতে শুয়েছিলাম। সকাল ৮টার সময় আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এর পর আব্দুল আজিজের বসতবাড়ির বারান্দায় কোমরে শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখে। টাকা না দিতে পারলে ছেড়ে দেবে না বলে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছেন।
সুদি ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক দিন পাওনা টাকা ফেরত চেয়েও পাইনি। তাই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে শিকলবন্দি করা হয়েছে, যেন পালিয়ে যেতে না পারে। টাকা পেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হতো।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মনোয়ারুজ্জামান জানান, সুদের টাকা শোধ করতে না পারায় তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বরপুর এলাকার কৃষক আসাদ আলীকে শিকলবন্দি করে রাখার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরে শনিবার সন্ধ্যায় সুদ ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। খবর পেয়ে পালিয়ে যায় আব্দুল আজিজ হোসেন। তাছাড়াও পুলিশের খবর পাওয়ার পর ভুক্তভোগী কৃষক আসাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কৃষকের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ওসি জানান, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে কৃষক আসাদকে তাঁর বাড়ি থেকে জোরপূর্বক হাতপা বেঁধে তুলে নিয়ে আসেন আব্দুল আজিজ হোসেন। পরে ওই কৃষককে আব্দুল আজিজের বাড়ির বারান্দায় মাজায় শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখে তার পরিবারকে টাকা নিয়ে আসার জন্য হুমকি দেন। পুলিশ যাওয়ার আগ পর্যন্ত কৃষককে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছিল।