নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্যপুরুষ ও বাঙালির ‘জাতীয় রাষ্ট্র’ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ১৯৬২ সালে গঠিত গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের শারীরিক অবনতি হওয়ায় লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, উনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
তিনি আরও বলেন, এতদিন তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে শরীরে জ্বর বেড়ে যায়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
৮২ বছর বয়সী এই নেতা উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে গত ২০ মে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল বলেন, ২০ মে ঢাকা মেডিকেলের ভিভিআইপি কেবিনে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে। দিন দিন তার অবস্থা আরও অবনতি হয়। গতকাল রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। দাদা ভাইয়ের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, সিরাজুল আলম খানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। পর্যায়ক্রমে তার অবস্থা আরও বেশি জটিল হচ্ছে। চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেলের ভিআইপি কেবিনে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়, অবস্থা আরও অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।
গত ৭ মে রাতে শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে ঢাকার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন সিরাজুল আলম খান। চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২০ মে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে।
এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছু দিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
মান-অভিমান নিয়ে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা নির্বাসিত জীবন কাটান সাবেক এই জাসদ নেতা। অকৃতদার সিরাজুল আলম খান ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকেন।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এর পর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।
তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদাভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনো জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।