Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরাজদিখানে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার গোডাউন বাজার মোড় থেকে কুচিয়ামোড়া কলেজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া এবং অবৈধভাবে ইট-বালু বহনকারী মাহিন্দ্রা ও ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, জলাবদ্ধতা ও কাদাপানি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি এখন যেন মৃত্যুকূপ।

সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পানি জমে আছে, কোথাও ভাঙা পিচের নিচে মাটি দেবে গেছে। ছোট যানবাহনের জন্য নির্মিত এই সড়কে এখন প্রতিদিন চলাচল করছে ভারী ট্রাক ও মাহিন্দ্রা। স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষ এই সড়কে চলাচল করেন। কিন্তু এখন প্রতিটি যাত্রাই হয়ে উঠেছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ পাড়ি দেওয়ার মতো।

গোডাউন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই রাস্তাটা একসময় আমাদের চলাচলের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু মাহিন্দ্রা গাড়িগুলো চলাচল শুরুর পর থেকেই রাস্তাটির বেহাল দশা শুরু হয়। ভারী এসব যানবাহনের চাপে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার সময় একধরনের আতঙ্ক কাজ করে, কখন কোথায় পা পিছলে পড়ে যাব, তার কোনো ঠিক নেই। ভোগান্তির যেন কোনো শেষ নেই।

অটোরিকশাচালক মো. রহিম উদ্দিন বলেন, এই রাস্তা হালকা যানবাহনের জন্য ছিল। এখন প্রতিদিন ইট-বালু বহনকারী ভারী ট্রাক চলে, তাই রাস্তায় গর্ত আর ধুলাবালির ছড়াছড়ি।

মোটরসাইকেলচালক তানভীর আহমেদ জানান, কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় তিনি একটি গর্তে পড়ে মারাত্মক আহত হন, যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁর ভাষায়, এই রাস্তায় চলা এখন আত্মহত্যার শামিল।

স্থানীয় কলেজছাত্রী মারিয়া সুলতানা বলেন, বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। গর্তগুলো পানিতে ডুবে থাকে, ঠিকমতো হাঁটার উপায় থাকে না। সময় ও পোশাক দুই-ই নষ্ট হয়।

খিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান রাতুল বলেন, এই রাস্তা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। প্রতিদিনই কষ্ট পোহাতে হয়। শিশুসন্তান বা অসুস্থ কাউকে নিয়ে চলতে ভয় লাগে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারী ট্রাক ও মাহিন্দ্রা চালিয়ে এই রাস্তাটির বারোটা বাজিয়েছেন। প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আসিফ উল্লাহ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আশপাশের ইটভাটা ও মাটি বহনকারী মাহিন্দ্রা এবং ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি অল্প সময়েই আবার নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অফিস থেকে টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে শুধু এলজিইডির কাজ করলেই হবে না, স্থানীয়দের সচেতনতা এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন। রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ না হলে পুনঃসংস্কারের পরও একই অবস্থা ফিরে আসবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সিরাজদিখানে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী

প্রকাশের সময় : ১২:২৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার গোডাউন বাজার মোড় থেকে কুচিয়ামোড়া কলেজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া এবং অবৈধভাবে ইট-বালু বহনকারী মাহিন্দ্রা ও ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, জলাবদ্ধতা ও কাদাপানি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি এখন যেন মৃত্যুকূপ।

সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পানি জমে আছে, কোথাও ভাঙা পিচের নিচে মাটি দেবে গেছে। ছোট যানবাহনের জন্য নির্মিত এই সড়কে এখন প্রতিদিন চলাচল করছে ভারী ট্রাক ও মাহিন্দ্রা। স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষ এই সড়কে চলাচল করেন। কিন্তু এখন প্রতিটি যাত্রাই হয়ে উঠেছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ পাড়ি দেওয়ার মতো।

গোডাউন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই রাস্তাটা একসময় আমাদের চলাচলের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু মাহিন্দ্রা গাড়িগুলো চলাচল শুরুর পর থেকেই রাস্তাটির বেহাল দশা শুরু হয়। ভারী এসব যানবাহনের চাপে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার সময় একধরনের আতঙ্ক কাজ করে, কখন কোথায় পা পিছলে পড়ে যাব, তার কোনো ঠিক নেই। ভোগান্তির যেন কোনো শেষ নেই।

অটোরিকশাচালক মো. রহিম উদ্দিন বলেন, এই রাস্তা হালকা যানবাহনের জন্য ছিল। এখন প্রতিদিন ইট-বালু বহনকারী ভারী ট্রাক চলে, তাই রাস্তায় গর্ত আর ধুলাবালির ছড়াছড়ি।

মোটরসাইকেলচালক তানভীর আহমেদ জানান, কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় তিনি একটি গর্তে পড়ে মারাত্মক আহত হন, যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁর ভাষায়, এই রাস্তায় চলা এখন আত্মহত্যার শামিল।

স্থানীয় কলেজছাত্রী মারিয়া সুলতানা বলেন, বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। গর্তগুলো পানিতে ডুবে থাকে, ঠিকমতো হাঁটার উপায় থাকে না। সময় ও পোশাক দুই-ই নষ্ট হয়।

খিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান রাতুল বলেন, এই রাস্তা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। প্রতিদিনই কষ্ট পোহাতে হয়। শিশুসন্তান বা অসুস্থ কাউকে নিয়ে চলতে ভয় লাগে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারী ট্রাক ও মাহিন্দ্রা চালিয়ে এই রাস্তাটির বারোটা বাজিয়েছেন। প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আসিফ উল্লাহ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আশপাশের ইটভাটা ও মাটি বহনকারী মাহিন্দ্রা এবং ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি অল্প সময়েই আবার নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অফিস থেকে টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে শুধু এলজিইডির কাজ করলেই হবে না, স্থানীয়দের সচেতনতা এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন। রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ না হলে পুনঃসংস্কারের পরও একই অবস্থা ফিরে আসবে।