সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জে টেবিল ও বেঞ্চে কয়েন ঠুকে গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দেওয়া খুদে শিল্পী সুমন শেখ (১৬) আর নেই।
সোমবার (১ মে) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। রাতেই রহমতগঞ্জ কবরস্থানে জানাজা নামাজ শেষে তার কবর দেওয়া হয়।
সুমন শেখ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শালুয়াভিটা গ্রামের আল-আমিন শেখের ছেলে। স্থানীয় হাটে-বাজারে দরাজ কণ্ঠে গাওয়া তার গান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। সে বাবা, মা, বোন ও আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী রেখে গেছে।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসান রশিদ মোল্লা।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুমন অসুস্থ ছিল। রোগ নিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইত সে। গতকাল দুপুরে তার খিঁচুনি শুরু হয়। এরপর স্বজনেরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সন্ধ্যায় স্থানীয় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
সুমনের বাবা আল-আমিন শেখ বলেন, ৮-৯ বছর বয়সে সুমন গাছ থেকে পড়ে যায়। সেই সময় সে মাথায় আঘাত পেয়েছিল। অনেক চিকিৎসা করা হয়। কিছু সময় ভালো, আবার কিছু সময় খারাপ হতো। দরিদ্র পরিবার হওয়াতে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারি নাই। এশার নামাজের পর রহমতগঞ্জ কবরস্থানে জানাজা নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর বয়স থেকেই গানের নেশা শুরু হয় সুমনের। হাতই ছিল তার বাদ্যযন্ত্র। দুই হাতে দুটি কয়েন দিলে টেবিল অথবা চেয়ারে বাজিয়েই খোলা গলায় গান ধরত সে। আর মুগ্ধ হয়ে শুনত মানুষ। এভাবেই প্রতিদিন হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে গাইতো সে। যদিও গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না তার। কিন্তু তার এই গান ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। তাকে নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেরাজুল ইসলাম বলেন, গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ ও বিনোদন দিয়ে যে টাকা পেতো তা দিয়ে দরিদ্র বাবার সংসারে সহযোগিতা করত সুমন। তার গানের গলা অসাধারণ ছিল। তার গানে অনেকেই আনন্দ পেতেন। সুমনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।