আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সাহিত্য জগতে অনবদ্য অবদান রাখায় ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার কবি ও লেখক হান কাং।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে স্থানীয় সময় ১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রয়্যাল সুইডশি একাডমে অফ সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর হ্যান্স এলেগ্রেন ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, হান ক্যাংকে তার ‘গভীর কাব্যিক গদ্যের’ জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তার এসব সাহিত্যকর্মে পূর্বের যুগে সাধারণ মানুষের ওপর হওয়া অত্যাচার-নির্যাতন এবং মানবজাতির ভঙ্গুরতার বিষয়টি ওঠে এসেছে।
হান ক্যাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াঞ্জুতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়স হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে রাজধানী সিউলে চলে আসেন তিনি। তার পরিবারও সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক। এছাড়া গান ও সংস্কৃতির প্রতিও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন হান ক্যাং। যা তার সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ান এই লেখিকার সবচেয়ে আলোচিত সাহিত্যকর্ম হলো (২০০৭; ‘দ্য ভেজেটেরিয়ান’, ২০১৫)। এটি তিন খণ্ডে লেখা হয়েছে। এটিতে এক নারীর গল্প তুলে আনা হয়েছে। যিনি মাংস খেতে অস্বীকৃতি জানানো পর কীভাবে তার স্বামী, বাবা এবং অন্যান্যদের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।
আগের বছর ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে। ইয়োন ফসের লেখা নাটক ও সাহিত্যের প্রশংসা করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, তিনি তার লেখায় অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু কথা তুলে এনেছেন।
বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার ওপর আলো ফেলার স্বীকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিক্টর অ্যাম্ব্রস ও গ্যারি রাভকুন এ বার চিকিৎসার নোবেল জিতেছেন।
মঙ্গলবার ঘোষণা হয় পদার্থবিদ্যার নোবেল। যাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে ‘মেশিন লার্নিং’ বা যন্ত্রকে শেখানোর পথ খুলে গিয়েছিল, সেই দুই বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের জন জে হপফিল্ড এবং কানাডার জেওফ্রে ই হিন্টন চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন।
এরপর বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নের নোবেল। প্রাণের অপরিহার্য জৈব অণু প্রোটিনের জটিল গঠন রহস্য উন্মোচনে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার এবং ব্রিটিশ গবেষক ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার।
১৮৯৫ সালে সুইডিশ উদ্ভাবক এবং সমাজসেবী আলফ্রেড নোবেলের উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিকে এ পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উইলে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বিজয়ীরা একটি সনদ, একটি গোল্ড মেডেল ও চেক পেয়ে থাকেন।
১৯০১ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল। এ পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নাম অনুসারে। ঊনবিংশ শতকের এই বিজ্ঞানী শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন। তিনি উইল করে গিয়েছিলেন যে তার যাবতীয় অর্থ থেকে যেন প্রতি বছর পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্য— এই ৫টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে এই ৫ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতিও।