Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাতকানিয়ার সংসদ সদস্যকে জামায়াতের এমপি বললেন নদভী

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে জামায়াতের এমপি বলে সম্বোধন করেছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

বৃহস্পতিবার (২১মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সাতকানিয়া-লোহাগড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি’, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা-মামলা’র প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে একহাত নিয়েছেন সাবেক সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও পরাজিত হয়েছেন। তিনি মোতালেবের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেছেন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দলটির সাতকানিয়া উপজেলার সভাপতি এম এ মোতালেবের কাছে পরাজিত হন। জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নদভী তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুইবার তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

‘পরাজয়ের পর প্রায় আড়াই মাস দৃশ্যপটের বাইরে থাকা আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের লোকজন জামায়াতকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেছে।’

নদভী বলেন, ‘সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেখানে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সম্ভাবনা না থাকায় দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা বর্ণচোরা চক্রটি জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে বলে জানতে পেরেছি। বিগত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ক্যাডারদের নৌকার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। তার বিনিময়ে তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেছে। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রস্তুতি নিচ্ছে ভাল করে।’

‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আবারও জামায়াত-শিবিরের দখলে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় নৌকা নেই, মানে আওয়ামী লীগ নেই। স্বতন্ত্র এমপি থাকলেও আমার মনে হয় জামায়াতে ইসলামীই সেখানে কাজ করছে। কারণ জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার বাকি নেই যারা মাঠে নেই। জামায়াতের সমস্ত লোহাগাড়ার ক্যাডার এখন মাঠে।’

‘তারা সেখানে এখন ওয়াজে প্রথমে আমাকে গালাগালি করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও ভারতকে গালাগাল দেয়। তাদের বক্তৃতা শুনে মনে হয় দেশটা ইসলামিক স্টেট হয়ে যাবে এবং সেটার সূচনা হবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে। এভাবে জামায়াত কাজগুলো করছে। তাহলে স্বতন্ত্র থেকে এমপি হয়েছেন যিনি, তিনি জামায়াতের এমপি কিনা সেটা আমি জানি না, এটা বুঝা যাচ্ছে না।’

সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছে আমি নাকি কাতার চলে গেছি। তারা বিমানের টিকিটের ভুয়া ছবি বানিয়ে ফেসবুকে এসব প্রচার করে বেড়াচ্ছে। আমি কেন দেশ ছেড়ে যাব? আমি জনগণের খেদমত করছি ৩০ বছর ধরে, যা আমৃত্যু অব্যাহত থাকবে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনোয়ন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে জামায়াত শিবিরের দুর্গ থেকে আওয়ামী লীগের দূর্গে পরিণত করেছিলাম।’

‘আজ সে জায়গায় স্বাধীনতার প্রতীক নৌকাকে পরাজিত করার জন্য জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাত করে স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পরপরই সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ভোটকেন্দ্রে না যেতে নৌকার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।’

সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতারা বাড়িতে যেতে পারছেন না অভিযোগ করে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারণার সময় আমার স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর ওপর হামলা করা হয়। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে প্রশাসন থেকেও অরধান সন্ত্রাসীদের নাম বাদ দিতে চাপ দেয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া। তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

নদভী বলেন, ‘এ সংবাদ সম্মেলনটি নির্বাচন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন নয়। এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে গত কয়েকদিন আগে সাতকানিয়ার দেওদীঘি এলাকায় আমাদের বাড়ির সামনে আ ম ম মিনহাজুর রহমান রমজান উপলক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জনকে সেমাই, চিনি দেওয়ার জন্য ডাকেন। পরে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে আমার এবং আমার স্ত্রীসহ পরিবারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য সম্বলিত প্লেকার্ড ও ব্যানার, ফেস্টুন ধরিয়ে দেয়।’

‘তাদের বলা হয়েছিল সেখানে ইফতার সামগ্রী দেবে ও মাদক বিরোধী সমাবেশ করবে। পরে তারা সেখানে গিয়ে অবাক হয়। পরে সেগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মিনহাজ ২০১৪ সালে আমার সঙ্গে ছিল। এখন আরেক জায়গায় গেছে। সে তো কোথাও স্থির হতে পারে না। বিজিসি ট্রাস্ট ও ইউএসটিসিতে ছিল। সেখানে থেকেও চলে গেছে। তার কাজ হলো কেউ এমপি হলে তার কাঁধে ভর করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা, অন্যের জমি-দখল করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাতকানিয়ায় আমি যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই, তিনি আমার কাছে আসেন। দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বলে বিভিন্ন প্রকল্প ভাগিয়ে নিতে চায়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মুসলিম উদ্দিন ও আবুল হোসেনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালান তিনি। তার এসব অপকর্ম এলাকাবাসী তথ্য প্রমাণসহ আমার সামনে হাজির করলে আমি তাকে আর কাছে ঘেঁষতে দিইনি। এরপর সে আদাজল খেয়ে আমার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। আজ সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিপীড়িত হচ্ছে। সাতকানিয়ায় তারা স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারছে না।’

এর আগে গত ১৭ মার্চ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিবাদে আবু রেজা নদভী ও তার ভাইপো সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.ন.ম সেলিমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নদভীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোতালেব। তিনি পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নদভী পেয়েছিলেন ৩৯ হাজার ১৫২ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিসসহ নদভীর পক্ষে নেতাকর্মীরা ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সাতকানিয়ার সংসদ সদস্যকে জামায়াতের এমপি বললেন নদভী

প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে জামায়াতের এমপি বলে সম্বোধন করেছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

বৃহস্পতিবার (২১মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সাতকানিয়া-লোহাগড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি’, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা-মামলা’র প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে একহাত নিয়েছেন সাবেক সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও পরাজিত হয়েছেন। তিনি মোতালেবের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেছেন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দলটির সাতকানিয়া উপজেলার সভাপতি এম এ মোতালেবের কাছে পরাজিত হন। জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নদভী তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুইবার তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

‘পরাজয়ের পর প্রায় আড়াই মাস দৃশ্যপটের বাইরে থাকা আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের লোকজন জামায়াতকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেছে।’

নদভী বলেন, ‘সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেখানে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সম্ভাবনা না থাকায় দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা বর্ণচোরা চক্রটি জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে বলে জানতে পেরেছি। বিগত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ক্যাডারদের নৌকার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। তার বিনিময়ে তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেছে। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রস্তুতি নিচ্ছে ভাল করে।’

‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আবারও জামায়াত-শিবিরের দখলে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় নৌকা নেই, মানে আওয়ামী লীগ নেই। স্বতন্ত্র এমপি থাকলেও আমার মনে হয় জামায়াতে ইসলামীই সেখানে কাজ করছে। কারণ জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার বাকি নেই যারা মাঠে নেই। জামায়াতের সমস্ত লোহাগাড়ার ক্যাডার এখন মাঠে।’

‘তারা সেখানে এখন ওয়াজে প্রথমে আমাকে গালাগালি করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও ভারতকে গালাগাল দেয়। তাদের বক্তৃতা শুনে মনে হয় দেশটা ইসলামিক স্টেট হয়ে যাবে এবং সেটার সূচনা হবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে। এভাবে জামায়াত কাজগুলো করছে। তাহলে স্বতন্ত্র থেকে এমপি হয়েছেন যিনি, তিনি জামায়াতের এমপি কিনা সেটা আমি জানি না, এটা বুঝা যাচ্ছে না।’

সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছে আমি নাকি কাতার চলে গেছি। তারা বিমানের টিকিটের ভুয়া ছবি বানিয়ে ফেসবুকে এসব প্রচার করে বেড়াচ্ছে। আমি কেন দেশ ছেড়ে যাব? আমি জনগণের খেদমত করছি ৩০ বছর ধরে, যা আমৃত্যু অব্যাহত থাকবে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনোয়ন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে জামায়াত শিবিরের দুর্গ থেকে আওয়ামী লীগের দূর্গে পরিণত করেছিলাম।’

‘আজ সে জায়গায় স্বাধীনতার প্রতীক নৌকাকে পরাজিত করার জন্য জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাত করে স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পরপরই সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ভোটকেন্দ্রে না যেতে নৌকার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।’

সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতারা বাড়িতে যেতে পারছেন না অভিযোগ করে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারণার সময় আমার স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর ওপর হামলা করা হয়। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে প্রশাসন থেকেও অরধান সন্ত্রাসীদের নাম বাদ দিতে চাপ দেয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া। তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

নদভী বলেন, ‘এ সংবাদ সম্মেলনটি নির্বাচন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন নয়। এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে গত কয়েকদিন আগে সাতকানিয়ার দেওদীঘি এলাকায় আমাদের বাড়ির সামনে আ ম ম মিনহাজুর রহমান রমজান উপলক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জনকে সেমাই, চিনি দেওয়ার জন্য ডাকেন। পরে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে আমার এবং আমার স্ত্রীসহ পরিবারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য সম্বলিত প্লেকার্ড ও ব্যানার, ফেস্টুন ধরিয়ে দেয়।’

‘তাদের বলা হয়েছিল সেখানে ইফতার সামগ্রী দেবে ও মাদক বিরোধী সমাবেশ করবে। পরে তারা সেখানে গিয়ে অবাক হয়। পরে সেগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মিনহাজ ২০১৪ সালে আমার সঙ্গে ছিল। এখন আরেক জায়গায় গেছে। সে তো কোথাও স্থির হতে পারে না। বিজিসি ট্রাস্ট ও ইউএসটিসিতে ছিল। সেখানে থেকেও চলে গেছে। তার কাজ হলো কেউ এমপি হলে তার কাঁধে ভর করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা, অন্যের জমি-দখল করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাতকানিয়ায় আমি যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই, তিনি আমার কাছে আসেন। দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বলে বিভিন্ন প্রকল্প ভাগিয়ে নিতে চায়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মুসলিম উদ্দিন ও আবুল হোসেনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালান তিনি। তার এসব অপকর্ম এলাকাবাসী তথ্য প্রমাণসহ আমার সামনে হাজির করলে আমি তাকে আর কাছে ঘেঁষতে দিইনি। এরপর সে আদাজল খেয়ে আমার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। আজ সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিপীড়িত হচ্ছে। সাতকানিয়ায় তারা স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারছে না।’

এর আগে গত ১৭ মার্চ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিবাদে আবু রেজা নদভী ও তার ভাইপো সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.ন.ম সেলিমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নদভীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোতালেব। তিনি পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নদভী পেয়েছিলেন ৩৯ হাজার ১৫২ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিসসহ নদভীর পক্ষে নেতাকর্মীরা ছিলেন।