নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাড়ে ১৫ বছর পর কারাগার থেকে বের হলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) ১৭৮ সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মোট ৪১ জন, কাশিমপুর-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর-২ থেকে ৮৯ জন,কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি থেকে ১২ জনসহ মোট ১৬৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এ তথ্য জানান কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
সরেজমিন দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের কারাগারের সামনে সকাল থেকে বিডিআর সদস্যদের স্বজনরা ফুল ও ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর একটা থেকে যখন জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা কারামুক্ত হয়ে বের হয়ে আসছিলেন তখন তাদের দেখে অপেক্ষমাণ স্বজনরা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য এবং তার স্বজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাদের সঙ্গে স্বজনরাও জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
কারাগার থেকে বের হয়ে বিডিআর সদস্যরা বলেন, বিনা দোষে জীবন থেকে আমাদের ১৬টি বছর চলে গেছে। আমাদের কোনো দোষ ছিল না। আমাদেরকে অন্যায়ভাবে ১৬টি বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এখন মুক্ত আকাশে বের হয়ে আমাদের ভালো লাগছে।
কারামুক্ত হয়ে আল আমিন নামে এক বিডিআর সদস্য বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। আমাদেরকে বিনা দোষে এত বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়। আজ আমরা কারামুক্ত হয়েছি। তবে এখনো আমাদের যেসব ভাইয়েরা বিনা দোষে কারাগারে রয়েছেন সরকার যেন তাদের দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা করে।
স্বজনদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় আরেক বিডিআর সদস্য বলেন, আমাদের জীবন তো শেষ, ১৬টি বছর কারাগারে কেটেছে। আমরা কোনো দোষ করিনি। আমাদেরকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়। এখন পরিবার পরিজনের কাছে আসতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে।
এ সময় এই বিডিআর সদস্যদের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেয়েছি। কোনোদিন ভাবিনি তাকে ফিরে পাব। এতটা দিন কারাগারে তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।
এছাড়া কারামুক্ত বিডিআর সদস্যদের বরণ করে নিতে আসেন তাদের সন্তানরাও। সন্তানরা বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। আবার অনেক সন্তান তাদের বাবাকে ফুলের মালা কিংবা ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন।
এ বিষয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স-ঢাকা বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর থেকে বিডিআরের সদস্যদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৭ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৯৫ জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনসহ সর্বমোট ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য আজ পর্যায়ক্রমে জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত জামিনপ্রাপ্ত ১৭৮ জন আসামির নাম প্রকাশ করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।