Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও চাঁদায় রাস্তা নির্মাণ করলেন গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা মিয়াপাড়া মহল্লার লোকজন নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও চাঁদা তুলে রাস্তা নির্মাণ করেছেন । সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় ২০০ মিটার রাস্তা প্রায় ১৬ ফুট মাটি ভরাট করে তারা নিজেরাই নির্মাণ করেছেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণে একটি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে দুইটি ট্রলি গাড়িতে করে সেই মাটি রাস্তায় নিয়ে ফেলেছেন। এতে এলাকার শিশু থেকে বয়স্করা সবাই সহায়তা করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ করতে সময় লেগেছে প্রায় এক সপ্তাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিটা মিয়াপাড়া মহল্লায় প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষের বাস। মহল্লাটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মসজিদ, ঈদগাহ ও গোরস্থান রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আসতে গ্রামবাসীর সমস্যা না হলেও বর্ষার সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভিজে বা নৌকায় যাতায়াত ছাড়া বিকল্প থাকে না।

পরে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামটিতে প্রবেশের জন্য টিটা খাঁপাড়া মহল্লা থেকে মিয়াপাড়া মহল্লায় সংযোগ রাস্তা তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু রাস্তাটি ১৯০০ মিটারের মধ্যে ১৭০০ মিটার কাজ হওয়ার পর প্রকল্পের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় কারণে অসমাপ্ত থেকে যায়। এতে রাস্তাটি এলাকাবাসীর কোনও কাজে না আসায় অসমাপ্ত ২০০ মিটার রাস্তা তারা নিজেরাই নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন।

পরে ওই এলাকার ইউপি সদস্য আবু সাইদ পটু মিয়া, এইচ এম খায়ের মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, কাইজার মিয়া, দেলোয়ার মিয়াসহ আরও কয়েকজন রাস্তাটি নির্মাণে উদ্যোগী হন। এরপর তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন।

টিটা মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এইচ এম খায়ের মিয়া বলেন, রাস্তাটির জন্য আমাদের মহল্লাবাসীর আজন্ম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অবশেষে সরকারিভাবে রাস্তা বরাদ্দ হলেও রাস্তাটি সম্পূর্ণ করেনি। তাই প্রথমে আমরা কয়েকজন নিজেদের অর্থায়নে রাস্তাটির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিই। পরে আমাদের উদ্যোগ দেখে গ্রামের সর্বস্তরের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের কাজ করছি। এ জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। বিভিন্ন হাটে কৃষিপণ্য নিয়ে যেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হতো। এ রাস্তা নির্মাণ হওয়ার কারণে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে কুষক আরও বেশি লাভবান হবেন।

টগরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামান জানান, ওই মহল্লায় যাতায়াতের জন্য কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দ শেষ হওয়ার কারণে কিছুটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। সরকারিভাবে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করতে হলে একটু অপেক্ষা করতে হতো। পরে ওই এলাকার লোকজন উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করেছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা রাহাত ইসলাম জানান, স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত হলে অবশ্যই এটিকে পাকা করার ব্যবস্থা করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসী নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ রকম ভালো কাজের সহযোগিতা সব সময় থাকবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মেসি জোড়া গোলের নৈপুন্যে ইন্টার মায়ামির জয়

সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও চাঁদায় রাস্তা নির্মাণ করলেন গ্রামবাসী

প্রকাশের সময় : ০১:২৭:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা মিয়াপাড়া মহল্লার লোকজন নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও চাঁদা তুলে রাস্তা নির্মাণ করেছেন । সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় ২০০ মিটার রাস্তা প্রায় ১৬ ফুট মাটি ভরাট করে তারা নিজেরাই নির্মাণ করেছেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণে একটি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে দুইটি ট্রলি গাড়িতে করে সেই মাটি রাস্তায় নিয়ে ফেলেছেন। এতে এলাকার শিশু থেকে বয়স্করা সবাই সহায়তা করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ করতে সময় লেগেছে প্রায় এক সপ্তাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিটা মিয়াপাড়া মহল্লায় প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষের বাস। মহল্লাটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মসজিদ, ঈদগাহ ও গোরস্থান রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আসতে গ্রামবাসীর সমস্যা না হলেও বর্ষার সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভিজে বা নৌকায় যাতায়াত ছাড়া বিকল্প থাকে না।

পরে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামটিতে প্রবেশের জন্য টিটা খাঁপাড়া মহল্লা থেকে মিয়াপাড়া মহল্লায় সংযোগ রাস্তা তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু রাস্তাটি ১৯০০ মিটারের মধ্যে ১৭০০ মিটার কাজ হওয়ার পর প্রকল্পের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় কারণে অসমাপ্ত থেকে যায়। এতে রাস্তাটি এলাকাবাসীর কোনও কাজে না আসায় অসমাপ্ত ২০০ মিটার রাস্তা তারা নিজেরাই নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন।

পরে ওই এলাকার ইউপি সদস্য আবু সাইদ পটু মিয়া, এইচ এম খায়ের মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, কাইজার মিয়া, দেলোয়ার মিয়াসহ আরও কয়েকজন রাস্তাটি নির্মাণে উদ্যোগী হন। এরপর তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন।

টিটা মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এইচ এম খায়ের মিয়া বলেন, রাস্তাটির জন্য আমাদের মহল্লাবাসীর আজন্ম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অবশেষে সরকারিভাবে রাস্তা বরাদ্দ হলেও রাস্তাটি সম্পূর্ণ করেনি। তাই প্রথমে আমরা কয়েকজন নিজেদের অর্থায়নে রাস্তাটির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিই। পরে আমাদের উদ্যোগ দেখে গ্রামের সর্বস্তরের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের কাজ করছি। এ জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। বিভিন্ন হাটে কৃষিপণ্য নিয়ে যেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হতো। এ রাস্তা নির্মাণ হওয়ার কারণে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে কুষক আরও বেশি লাভবান হবেন।

টগরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামান জানান, ওই মহল্লায় যাতায়াতের জন্য কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দ শেষ হওয়ার কারণে কিছুটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। সরকারিভাবে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করতে হলে একটু অপেক্ষা করতে হতো। পরে ওই এলাকার লোকজন উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করেছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা রাহাত ইসলাম জানান, স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত হলে অবশ্যই এটিকে পাকা করার ব্যবস্থা করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসী নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ রকম ভালো কাজের সহযোগিতা সব সময় থাকবে।