নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি চাকরিজীবীরা বিশেষ বেতন (বিশেষ প্রণোদনা) হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রোববার (২৫ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী যারা আছে, তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ এই আপতকালীন সময়ে প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী, আশা করি এ বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে একটা লোক দেখান যে, নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে; একটি মানুষ দেখান। সে রকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই। আমরা জানি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে উন্নত করতে হলে, আমাদেরই দরকার। তাই জনগণকে এটিই বলব, বার বার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে আজকে আমরা দেশটাকে এই উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি। দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। আজকে বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র তিন ভাগ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ের মধ্যে এবারের বাজেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বিশ্বে বেড়েছে। যার আঘাত বাংলাদেশেও লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনসের কারণে অনেক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা বাজেট দিতে পেরেছি, সেটাই সব থেকে বড় কথা। জনগণ ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এ বাজেট দিতে পারছি। এ বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম। চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ নির্বাচন এ বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট। তবে একেবারে শেষ কি না সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। নানা ধরনের কথা বলেছেন। অনেকে সংস্কারের কথা বলেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই করুক না কেন বাজেট নিয়ে যে তারা চিন্তা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরের বাজেট নিয়ে যারা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসারে নারীরা যে কাজ করেন এটা কিন্তু বিরাট কর্মক্ষেত্র। এটা কিন্তু হিসেবে নেওয়া হয় না। এটা হিসেবে নেওয়া হলে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক অগ্রগামী হতো। সেটা বাদ রেখে হিসাব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে বলবো আগামীতে যেন গৃহস্থালি কাজকেও হিসেবে নেন। কারণ সেখানেও কিন্তু নারীরা উৎপাদনমুখী কাজ করেন।
রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করবো, সেই কাজই শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের ৪টি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো স্মার্ট সিটিজেট, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে বলেও মনে করে শেখ হাসিনা।
বিদ্যমান কাস্টমস আইনকে আরও বেশি যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, দপ্তর সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ, আসল এবং বিনিয়োগের মুনাফা বাবদ বিপুল অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে। অর্থ বিভাগ এসব পাওনা আদায়ের জন্য চেষ্টা করছে। সব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, সেখানে আমাদের বিদ্যুতেও আছে। অনেক জায়গায় বিল দেওয়া হয়নি। সেগুলো আমরা দিয়ে দেব।
বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে রিজার্ভে টান পড়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরও ৪/৫ মাস খাদ্য কেনার সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটি বাজেট দেওয়াই বড় ব্যাপার। সংকটের মধ্যেও শক্ত হাতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান মেয়াদে এটাই শেষ বাজেট; তবে একেবারে শেষ বাজেট কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ ভোটের মাধ্যমে নেবে।
অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে এখনও ৩৫তম অবস্থানে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।