Dhaka রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সড়কে পোশাক শ্রমিকদের তাণ্ডব, পুলিশের পিকআপে আগুন

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শিল্প কারখানার শ্রমিকরা সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময়ে শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটপাটকেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের গুলিতে শ্রমিক-পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। শ্রমিকরা সড়কে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে কয়েকজন হলেন এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়া। তবে বাকি আহতদের তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, সকালে মজুরি বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোর যৌক্তিক দাবিতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় হঠাৎ করেই পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ সময় শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর কেন গুলি চালালো?’ শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার বিচারের দাবি জানান তারা।

এদিকে, স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের প্রধান ডা. জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গুলিবিদ্ধসহ আহত অবস্থায় অন্তত ২০ জন শ্রমিককে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে ৪-৫ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পেয়েছি। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিল। তাকেসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।’

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

বেতন বাড়ানোর দাবিতে টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো সোমবারও আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এ দিন সকাল ৯টা থেকে ভোগড়া বাইপাসের আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং একদল শ্রমিক পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ এস পি) মোশারাফ বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কারের ভবিষ্যৎ পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেব না : নাহিদ ইসলাম

সড়কে পোশাক শ্রমিকদের তাণ্ডব, পুলিশের পিকআপে আগুন

প্রকাশের সময় : ০৩:১০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শিল্প কারখানার শ্রমিকরা সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময়ে শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটপাটকেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের গুলিতে শ্রমিক-পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। শ্রমিকরা সড়কে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে কয়েকজন হলেন এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়া। তবে বাকি আহতদের তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, সকালে মজুরি বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোর যৌক্তিক দাবিতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় হঠাৎ করেই পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ সময় শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর কেন গুলি চালালো?’ শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার বিচারের দাবি জানান তারা।

এদিকে, স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের প্রধান ডা. জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গুলিবিদ্ধসহ আহত অবস্থায় অন্তত ২০ জন শ্রমিককে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে ৪-৫ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পেয়েছি। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিল। তাকেসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।’

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

বেতন বাড়ানোর দাবিতে টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো সোমবারও আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এ দিন সকাল ৯টা থেকে ভোগড়া বাইপাসের আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং একদল শ্রমিক পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ এস পি) মোশারাফ বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’