Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সড়ক নয় যেন মৃত্যুফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলো এখন রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ব রাস্তাগুলো ডেকে আনছে ঘন ঘন দুর্ঘটনার বিপদ। গত এক বছরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁকে ছোট-বড় শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫-২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েক শতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। তবে এবার কোরবানি ঈদে এ সড়কে আরো দুর্ঘটনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে অন্যতম কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া-মাওনা সড়ক। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বেড়েছে সড়কটির গুরুত্বও। সড়কে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। কিন্তু এ সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার অংশের প্রায় ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯টি বাঁকই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- নামাশুলাই একটি, খালপাড় কমিনিউটি ক্লিনিকের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি, মেদীআশুলাই পুকুরপাড় একটি, মেদীআশুলাই জামে মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে তিনটি, ভাঙ্গাবাড়ী একটি, কাঞ্চানপুর একটি, টেকিবাড়ি একটি, হবুয়ারচালা তিনটি, মজিদচালা একটি, বড়চালা একটি, বাশাকৈর একটি, ফুলবাড়িয়া বাজারের পূর্বপাশে একটি ও সালদোপাড়া একটি।

বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও পার্শ্ব রাস্তায় সতর্কতামূলক সংকেত থাকলেও এখনো অনেক বাঁক অরক্ষিত। আবার সংকেত থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ট্রাক, মাছবাহী ট্রাক, অবৈধ সিএনজি ও মোটরসাইকেলগুলো। তবে সড়ক সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাবাড়ির ভুল সংকেত অনুস্মরণ করলে নির্ঘাত দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হবে। অপরদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত নয় সিএনজি-অটোরিকশার চালকরা। এছাড়াও সংকেত ও চিহ্ন থাকার পরও বিপজ্জনক বাঁকে ওভারটেকিং, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, সড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো-নামানোর কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও।

আর দুর্ঘটনার ফলে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে যানবাহন। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও চাপাইর এলাকার তুরাগ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি ভেঙে বড়ো দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলেও সেদিকে নজর নেই যেন কারো। যোগাযোগ খাতে এ সড়কের পরিধি ও সংস্কার বাড়লেও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি উপেক্ষিত।

এবার কোরবানি ঈদকে ঘিরে এ সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ছাড়াও ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্তকরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি সচেতন মহলের।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন জানান, দুর্ঘটনা রোধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কতামূলক সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে খবরটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সম্প্রতি ওই সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনা রোধে মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

সড়ক নয় যেন মৃত্যুফাঁদ

প্রকাশের সময় : ০১:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলো এখন রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ব রাস্তাগুলো ডেকে আনছে ঘন ঘন দুর্ঘটনার বিপদ। গত এক বছরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁকে ছোট-বড় শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫-২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েক শতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। তবে এবার কোরবানি ঈদে এ সড়কে আরো দুর্ঘটনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে অন্যতম কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া-মাওনা সড়ক। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বেড়েছে সড়কটির গুরুত্বও। সড়কে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। কিন্তু এ সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার অংশের প্রায় ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯টি বাঁকই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- নামাশুলাই একটি, খালপাড় কমিনিউটি ক্লিনিকের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি, মেদীআশুলাই পুকুরপাড় একটি, মেদীআশুলাই জামে মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে তিনটি, ভাঙ্গাবাড়ী একটি, কাঞ্চানপুর একটি, টেকিবাড়ি একটি, হবুয়ারচালা তিনটি, মজিদচালা একটি, বড়চালা একটি, বাশাকৈর একটি, ফুলবাড়িয়া বাজারের পূর্বপাশে একটি ও সালদোপাড়া একটি।

বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও পার্শ্ব রাস্তায় সতর্কতামূলক সংকেত থাকলেও এখনো অনেক বাঁক অরক্ষিত। আবার সংকেত থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ট্রাক, মাছবাহী ট্রাক, অবৈধ সিএনজি ও মোটরসাইকেলগুলো। তবে সড়ক সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাবাড়ির ভুল সংকেত অনুস্মরণ করলে নির্ঘাত দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হবে। অপরদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত নয় সিএনজি-অটোরিকশার চালকরা। এছাড়াও সংকেত ও চিহ্ন থাকার পরও বিপজ্জনক বাঁকে ওভারটেকিং, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, সড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো-নামানোর কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও।

আর দুর্ঘটনার ফলে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে যানবাহন। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও চাপাইর এলাকার তুরাগ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি ভেঙে বড়ো দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলেও সেদিকে নজর নেই যেন কারো। যোগাযোগ খাতে এ সড়কের পরিধি ও সংস্কার বাড়লেও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি উপেক্ষিত।

এবার কোরবানি ঈদকে ঘিরে এ সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ছাড়াও ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্তকরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি সচেতন মহলের।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন জানান, দুর্ঘটনা রোধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কতামূলক সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে খবরটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সম্প্রতি ওই সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনা রোধে মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।