কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংস্কারে গতি বাড়ান। মৌলিক সংস্কার করে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিন। যাতে আপনারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা আপনাদের চাপ দিচ্ছি না। আমরা অনুরোধ করছি মূল্যবান সময়টাকে দীর্ঘায়িত না করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিন। তিনি আরও বলেন, ভারতের হলুদ মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট যুদ্ধ শুরু করেছে, তারা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তখন জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ছেলেমেয়েরা বের হয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে এ দেশ আমাদের সবার।
আওয়ামী লীগ ও ভারতকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা কাদের ভয় দেখাচ্ছেন? যারা এক হাত হারানোর পরও, পঙ্গুত্ব বরণ করার পরও যুদ্ধে প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিল, তাদের ভয় দেখাবেন না। শাহাদাত যাদের প্রিয় তাদের দিকে চোখ রাঙাবেন না।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সকল ব্যক্তি এ দেশের গর্বিত নাগরিক। ভারত এটা নিয়ে ট্রাম্পকার্ড খেলছে। অথচ সারা দুনিয়া দেখছে কে সাম্প্রদায়িক, কে সংখ্যালঘু হত্যাকারী। আমাদের জীবন থাকতে এ দেশের একটি ধূলিকণাও কাউকে দখল করতে দেব না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যতজন শহীদ হয়েছেন, আল্লাহ তাদের কবুল করুক। যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল। দুটি কমিশন গঠন করা হলো, কিন্তু আলোর মুখ দেখল না। কারণ শর্ষের মধ্যে ভূত ছিল। অন্তর্র্বতী সরকারকে বলব, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের সহকর্মীদের হত্যার কারণ জানতে চায়। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করুন।
শফিকুর রহমান বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর দেশপ্রেমিক সুশৃঙ্খল বিডিআরকে বানানো হলো সীমান্তের চৌকিদার। আওয়ামী লীগ জনগণকে হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড করেছিল। আমরা প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার চাই। বিচার না করলে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুটি বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুমিল্লা বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো জেলার কেন্দ্রস্থল কুমিল্লা। তাই বর্তমান সরকারকে বলব, কুমিল্লা বিমানবন্দরের দিকে নজর দিন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কুমিল্লা নামে বিভাগ না দিয়ে শেখ হাসিনা কুমিল্লাবাসীকে অপমানিত করেছেন। কুমিল্লায় বিভাগ ও বিমান বন্দর চালুকরণ কুমিল্লাবাসীর একটি যৌক্তিক দাবি। কুমিল্লা অঞ্চল আমাজন থেকে আসেনি। কুমিল্লা বাংলাদেশেরই অন্যতম একটি জেলা। বাবার খুনির এলাকা কুমিল্লা নামে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষকে বারবার অপমানিত করেছেন শেখ হাসিনা। কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ হওয়া উচিত।
এসময় জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে দুটি বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুমিল্লা বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো জেলার কেন্দ্রস্থল কুমিল্লা। তাই বর্তমান সরকারকে বলব, কুমিল্লা বিমানবন্দরের দিকে নজর দিন।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে বলব, কিছু মৌলিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। তরুণ প্রজন্ম ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তারাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরের আমির কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা মহানগরীর নায়েবে আমির মু. মোছলেহ উদ্দিন ও এ কে এম এমদাদুল হক মামুন।