Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ দিনে ট্রেনে স্বস্তির ঈদযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বুধবার (২৮ জুন) শেষ দিনের মতো ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদের আগের দিনে ট্রেনে স্বস্তিতে বাড়ি যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। রেলে চাপ নেই তেমন। স্টেশনের অবস্থাও ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। যে যার সিটে বসে স্বস্তিতেই যাচ্ছেন বাড়ি।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদা বেশি ছিল। একই সাথে কমিউটার ট্রেনেও ছিল বাড়তি চাপ। নানা ভোগান্তিকে সঙ্গী করে মানুষ ঢাকা ছাড়লেও সবার চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শিশুদের উচ্ছ্বাস দেখার মতো।

বুধবার (২৮ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আর একদিন পরেই ঈদুল আজহা। ঈদযাত্রার শেষ দিনে বাড়ি ফেরার তাড়া ঘরমুখো মানুষের। নিরাপদে বাড়ি যেতে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন যাত্রীরা। যারা অনলাইন মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারেননি তাদের জন্য যাত্রার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়ানো (স্ট্যান্ডিং টিকিট) টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলোতে দেখা যায়, ট্রেনের সব সিট যাত্রীতে পরিপূর্ণ। স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরাও উঠেছেন ট্রেনগুলোতে।

ঈদে বাড়ি যেতে স্ট্যান্ডিং টিকিটের লাইনে ছিলেন সজীব হোসেন নামের এক যাত্রী। রংপুরগামী এই যাত্রী বলেন, দূরের পথ হলেও স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে দাঁড়িয়েছি। বাসের চেয়ে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়াও স্বস্তিদায়ক।

সবুজ আহমেদ নামে নীলসাগর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ঈদে উত্তরবঙ্গের মানুষ বাসে গেলে যানজটে পড়েন। এজন্য সবাই ট্রেনে যেতে চান। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কেটেছিলাম। সহজেই টিকিট পেয়ে এখন শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠেছি। যদিও দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারছি, এটাই আনন্দের।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র বলছে, এবার বিক্রি করা মোট আসনের ২৫ ভাগ আসনবিহীন টিকিট বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে কমলাপুর কাউন্টার থেকে। আসনবিহীন এ টিকিট পেতে ভোর থেকেই কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় দেখা গেছে টিকিটপ্রত্যাশীদের। অনেক যাত্রীরা স্টেশনের মূল ফটক থেকেও আসনবিহীন টিকিট কাটতে পারছেন।

রাজধানীর মালিবাগ থেকে আসা শাহরিয়ার আলম বলেন, সকালে স্টেশনে আসার জন্য বের হবো তখনই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে সকালে সিএনজিও পাচ্ছিলাম না। শেষে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে স্টেশনে আসলাম।

রাজারবাগ থেকে আসা মমিনুল মন্ডল বলেন, বৃষ্টিতে ভিজেই স্টেশনে আসতে হয়েছে। গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাবো। ট্রেন ধরতে না পারলে বাড়ি যাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়েছি যেন ট্রেন মিস না হয়।

নাজনিন বেগম নামের এক নারী বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি ঈদ করতে। ট্রেনে গেলে ভোগান্তিটা কম হয়। কিন্তু আজ সকালেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনে আসতে কষ্ট হয়েছে।

রাজধানীর বংশাল থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে আসা রিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে বাচ্চাকে নিয়ে সিএনজিতে এসেছি। ভাড়া বেশি নিয়েছে। তারপরও কিছু করার নেই। ঈদ করতে বাড়িতেতো যেতে হবে।

স্টেশনে ছোটাছুটি করা শিশু রাইয়ান বলে- দাদু বাড়িতে ঈদ করার জন্য যাচ্ছি, অনেক মজা হবে। আরেক শিশু তানহা বলে- বাবা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি ঈদ করতে, আমার গ্রামে যেতে অনেক ভালো লাগে। এসময় তার বাবা বলেন, ঈদে বাচ্চাদের আনন্দটাই বেশি। ওদের জন্যই তো বাড়ি যাওয়া।

ঈদের আগের দিনে ট্রেনে স্বস্তিতে বাড়ি যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। ট্রেনে নেই তেমন চাপ। স্টেশনের অবস্থা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। যে যার সিটে বসে স্বস্তিতেই বাড়ি যাচ্ছেন। সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, সঠিক সময়েই স্টেশনের ৭ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস। প্লাটফর্মে ট্রেন প্রবেশ করলে শুরুর দিকে উঠতে একটু তাড়াহুড়ো থাকলেও কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনে উঠে মানুষ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, আপনারা দেখছেন আজ ট্রেনে ভেতরে অনেকটাই ফাঁকা। সবাই যার যার সিটে বসে যাচ্ছে। গতকাল কিছুটা চাপ ছিল। আজকে তেমন চাপ নেই। দুএকটি ট্রেনে ২-১ ঘণ্টা লেইটে ছেড়েছে। অধিকাংশ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। সবমিলিয়ে এবার স্বস্তিতেই বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।

এর আগে মঙ্গলবার দিনভর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীর চাপ বেশি দেখা গেছে। উত্তরাঞ্চলের কিছু ট্রেনের ছাদেও উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। স্টেশনে কর্তব্যরতরা নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা ছাদে ভ্রমণ করে।

এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে ৫৩ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। এসব আন্তঃনগর, লোকাল মিলে ট্রেনে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী ঢাকা ছাড়ছে।

রাজধানীর ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আজ ৩৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। আর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে লালমনি স্পেশাল ও পঞ্চগড় স্পেশাল ছেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ৮টি কমিউটার ট্রেন চলছে আজ। এতে প্রায় ১ লাখ যাত্রী ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারছে এবারের ঈদে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

শেষ দিনে ট্রেনে স্বস্তির ঈদযাত্রা

প্রকাশের সময় : ০১:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বুধবার (২৮ জুন) শেষ দিনের মতো ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদের আগের দিনে ট্রেনে স্বস্তিতে বাড়ি যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। রেলে চাপ নেই তেমন। স্টেশনের অবস্থাও ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। যে যার সিটে বসে স্বস্তিতেই যাচ্ছেন বাড়ি।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদা বেশি ছিল। একই সাথে কমিউটার ট্রেনেও ছিল বাড়তি চাপ। নানা ভোগান্তিকে সঙ্গী করে মানুষ ঢাকা ছাড়লেও সবার চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শিশুদের উচ্ছ্বাস দেখার মতো।

বুধবার (২৮ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আর একদিন পরেই ঈদুল আজহা। ঈদযাত্রার শেষ দিনে বাড়ি ফেরার তাড়া ঘরমুখো মানুষের। নিরাপদে বাড়ি যেতে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন যাত্রীরা। যারা অনলাইন মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারেননি তাদের জন্য যাত্রার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়ানো (স্ট্যান্ডিং টিকিট) টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলোতে দেখা যায়, ট্রেনের সব সিট যাত্রীতে পরিপূর্ণ। স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরাও উঠেছেন ট্রেনগুলোতে।

ঈদে বাড়ি যেতে স্ট্যান্ডিং টিকিটের লাইনে ছিলেন সজীব হোসেন নামের এক যাত্রী। রংপুরগামী এই যাত্রী বলেন, দূরের পথ হলেও স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে দাঁড়িয়েছি। বাসের চেয়ে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়াও স্বস্তিদায়ক।

সবুজ আহমেদ নামে নীলসাগর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ঈদে উত্তরবঙ্গের মানুষ বাসে গেলে যানজটে পড়েন। এজন্য সবাই ট্রেনে যেতে চান। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কেটেছিলাম। সহজেই টিকিট পেয়ে এখন শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠেছি। যদিও দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারছি, এটাই আনন্দের।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র বলছে, এবার বিক্রি করা মোট আসনের ২৫ ভাগ আসনবিহীন টিকিট বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে কমলাপুর কাউন্টার থেকে। আসনবিহীন এ টিকিট পেতে ভোর থেকেই কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় দেখা গেছে টিকিটপ্রত্যাশীদের। অনেক যাত্রীরা স্টেশনের মূল ফটক থেকেও আসনবিহীন টিকিট কাটতে পারছেন।

রাজধানীর মালিবাগ থেকে আসা শাহরিয়ার আলম বলেন, সকালে স্টেশনে আসার জন্য বের হবো তখনই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে সকালে সিএনজিও পাচ্ছিলাম না। শেষে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে স্টেশনে আসলাম।

রাজারবাগ থেকে আসা মমিনুল মন্ডল বলেন, বৃষ্টিতে ভিজেই স্টেশনে আসতে হয়েছে। গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাবো। ট্রেন ধরতে না পারলে বাড়ি যাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়েছি যেন ট্রেন মিস না হয়।

নাজনিন বেগম নামের এক নারী বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি ঈদ করতে। ট্রেনে গেলে ভোগান্তিটা কম হয়। কিন্তু আজ সকালেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনে আসতে কষ্ট হয়েছে।

রাজধানীর বংশাল থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে আসা রিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে বাচ্চাকে নিয়ে সিএনজিতে এসেছি। ভাড়া বেশি নিয়েছে। তারপরও কিছু করার নেই। ঈদ করতে বাড়িতেতো যেতে হবে।

স্টেশনে ছোটাছুটি করা শিশু রাইয়ান বলে- দাদু বাড়িতে ঈদ করার জন্য যাচ্ছি, অনেক মজা হবে। আরেক শিশু তানহা বলে- বাবা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি ঈদ করতে, আমার গ্রামে যেতে অনেক ভালো লাগে। এসময় তার বাবা বলেন, ঈদে বাচ্চাদের আনন্দটাই বেশি। ওদের জন্যই তো বাড়ি যাওয়া।

ঈদের আগের দিনে ট্রেনে স্বস্তিতে বাড়ি যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। ট্রেনে নেই তেমন চাপ। স্টেশনের অবস্থা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। যে যার সিটে বসে স্বস্তিতেই বাড়ি যাচ্ছেন। সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, সঠিক সময়েই স্টেশনের ৭ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস। প্লাটফর্মে ট্রেন প্রবেশ করলে শুরুর দিকে উঠতে একটু তাড়াহুড়ো থাকলেও কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনে উঠে মানুষ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, আপনারা দেখছেন আজ ট্রেনে ভেতরে অনেকটাই ফাঁকা। সবাই যার যার সিটে বসে যাচ্ছে। গতকাল কিছুটা চাপ ছিল। আজকে তেমন চাপ নেই। দুএকটি ট্রেনে ২-১ ঘণ্টা লেইটে ছেড়েছে। অধিকাংশ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। সবমিলিয়ে এবার স্বস্তিতেই বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।

এর আগে মঙ্গলবার দিনভর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীর চাপ বেশি দেখা গেছে। উত্তরাঞ্চলের কিছু ট্রেনের ছাদেও উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। স্টেশনে কর্তব্যরতরা নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা ছাদে ভ্রমণ করে।

এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে ৫৩ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। এসব আন্তঃনগর, লোকাল মিলে ট্রেনে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী ঢাকা ছাড়ছে।

রাজধানীর ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আজ ৩৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। আর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে লালমনি স্পেশাল ও পঞ্চগড় স্পেশাল ছেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ৮টি কমিউটার ট্রেন চলছে আজ। এতে প্রায় ১ লাখ যাত্রী ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারছে এবারের ঈদে।