বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ। এ দেশের মানুষ দেখুক এবং ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তারা যাতে এটি মাথায় রাখে যে, এই দেশে স্বৈরাচারের কোনো জায়গা নেই, ফ্যাসিবাদের কোনো জায়গা নেই। যারা গণতন্ত্র হত্যা করবে তাদের এ পরিণতি হবে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম অতন্দ্র প্রহরী শীর্ষক’ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সমাবেশের এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই এ দেশের প্রকৃত রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক দল ছিল না; তারা মূলত গণতন্ত্রের মুখোশ পরা একটি মাফিয়া–ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। সংবিধান লঙ্ঘনের কর্মকাণ্ড তারা বারবার করেছে, এমনকি সংসদে দাঁড়িয়েও করেছে।
তিনি বলেন, জনগণের গণ-অভ্যুত্থান এবং অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। দেশের মানুষ বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা চায়।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমাদের সেই দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে রক্তের সিঁড়ি বানাতে বানাতে সেই জায়গায় গিয়ে ছাত্র-গণঅভ্যত্থান সৃজন হয়েছে। এই ছাত্র-গণঅভ্যত্থান শুধুমাত্র ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় নাই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ দেড় দশকের টানা শাসনের ইতি ঘটে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কিছু মন্ত্রী-এমপি ও নেতা চলে গেছেন অন্য দেশে। বাকিরা দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থান পরিবর্তি সময়ে কয়েক ডজন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তার মধ্যে অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির।
আওয়ামী লীগের দেশ দশকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “সেজন্য যারা জুলাই আগস্টের চেতনার কথা বলেন, সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আওয়ামী লীগ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একক ‘ঠিকাদারি’ নিয়ে চেতনার ব্যবসা করতে করতে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছে।
“চব্বিশের ছাত্র গণ-অভ্যূত্থানের চেতনাকে যারা রাজনৈতিকভাবে, রাজনৈতিক ব্যবসা করার কোনোরকমের মানসিকতা লালন করেন, তাদেরকে অনুরোধ করবো, এই জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের, এই অনুপ্রেরণা, এই ধারাবাহিকতা, এই ইতিহাস, এই চেতনা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। সুতরাং কেউ যেন রাজনৈতিক দল সৃজন করে জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার একক মালিকানা দাবি না করে। রাজনৈতিকভাবে চেতনার ব্যবসা যারাই করে, তাদের পরিণতি শুভ হয় না।”
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক’ দাবি করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, “সারা পৃথিবী জানে, সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কিন্তু মিথ্যা একটি ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বরাত দিয়ে (স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে) শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সেই ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বয়ান সংবিধানের তফসিলে ধারণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিথ্যার রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, সেটা ধোপে টিকে নাই।”
আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির চর্চাই ছিল মিথ্যার উপর ভিত্তি করে, গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি। বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের ইতিহাস। নতুন কিছু নয়।
“আমরা ২০২৪ এর জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-গণঅভ্যত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী বাকশালী ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পেরেছি, এটা সত্য। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির মাফিয়া শক্তির মূল উৎপাটন এখনো পর্যন্ত বাকি আছে।”
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ যে ‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক শক্তি’ ছিল না তা প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিনের ভাষ্য, “আওয়ামী বাকশালী শক্তি যে এদেশের রাজনৈতিক শক্তি ছিল না, কখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে, তাদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যদিয়ে। ভারতে আশ্রিত থেকে তাদের সহায়তায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার যে প্রবণতা, পাঁয়তারা-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এদেশের রাজনৈতিক দল ছিল না কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো গণতান্ত্রিক দলও ছিল না। একটি ‘মাফিয়া ফ্যাসিস্ট’ শক্তি ছিল গণতন্ত্রের মুখোশে আলকেল্লা পড়ে।”
সমাবেশে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনে দলের মনোনীত এমপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা গুপ্ত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। এ সময় নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
প্রতিনিধির নাম 























