Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পাচ্ছি : মাহফুজ আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তবে শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সংলাপে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকেরা অংশ নেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের বলেন, উনাকে (শেখ হাসিনা) তারা (ভারত) ফেরত দেবে না বলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি।

এই উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে, সরকার বদলালে যাতে পররাষ্ট্রনীতি বদলাতে না হয়, বিষয়টি সামনে রেখে কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, আমাদের অখণ্ডতা রক্ষাই আমাদের অগ্রাধিকার।

মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের জায়গায় আমাদের শক্তি ও সক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে চাই। কোন রাষ্ট্র কী করল, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং দর কষাকষির শক্তি বাড়ানো। বাংলাদেশ যদি সক্ষমতা বাড়ায়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দর কষাকষির শক্তি বাড়বে। এটি আমাদের জনগণকে উপকৃত করবে।

শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত সরকার এক ধরনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছিল। আমাদের সরকারের জায়গায় আমরা চেষ্টা করছি, বাস্তববাদী হতে। যদি আমাদের ভুল বা হঠকারিতা থাকে, তা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করি, এটি আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করছি বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের ঐকমত্য চাই আমরা।’

আলোচনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চীন, মিয়ানমার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত- এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ পর্যায়ে এসে আমরা রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। এসব আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এ সময়ে সংস্কারগুলোকে কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়। সেক্ষত্রে আমাদের মতামত হিসেবে বলেছি, আমাদের একটা বিস্তৃত পরামর্শ দরকার। রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের দরকার সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের একটা ঐকমত্যের দিকে এগোনো। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঐকমত্য এটা যেন জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐকমত্য হয় এবং এটা কোনোভাবে যেন সরকার অদল-বদলের ভিত্তিতে না হয়। বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে। আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাময় এক জায়গায় পুরো দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। জনকূটনীতি, সফট পাওয়ার কীভাবে সামঞ্জস্য করা যায় বাইরের দেশগুলোতে। কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় ছিলেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে ভারতের চিঠির জন্য অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ। ভারতের কাছ চিঠির জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পাচ্ছি : মাহফুজ আলম

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তবে শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সংলাপে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকেরা অংশ নেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের বলেন, উনাকে (শেখ হাসিনা) তারা (ভারত) ফেরত দেবে না বলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি।

এই উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে, সরকার বদলালে যাতে পররাষ্ট্রনীতি বদলাতে না হয়, বিষয়টি সামনে রেখে কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, আমাদের অখণ্ডতা রক্ষাই আমাদের অগ্রাধিকার।

মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের জায়গায় আমাদের শক্তি ও সক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে চাই। কোন রাষ্ট্র কী করল, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং দর কষাকষির শক্তি বাড়ানো। বাংলাদেশ যদি সক্ষমতা বাড়ায়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দর কষাকষির শক্তি বাড়বে। এটি আমাদের জনগণকে উপকৃত করবে।

শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত সরকার এক ধরনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছিল। আমাদের সরকারের জায়গায় আমরা চেষ্টা করছি, বাস্তববাদী হতে। যদি আমাদের ভুল বা হঠকারিতা থাকে, তা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করি, এটি আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করছি বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের ঐকমত্য চাই আমরা।’

আলোচনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চীন, মিয়ানমার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত- এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ পর্যায়ে এসে আমরা রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। এসব আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এ সময়ে সংস্কারগুলোকে কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়। সেক্ষত্রে আমাদের মতামত হিসেবে বলেছি, আমাদের একটা বিস্তৃত পরামর্শ দরকার। রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের দরকার সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের একটা ঐকমত্যের দিকে এগোনো। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঐকমত্য এটা যেন জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐকমত্য হয় এবং এটা কোনোভাবে যেন সরকার অদল-বদলের ভিত্তিতে না হয়। বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে। আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাময় এক জায়গায় পুরো দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। জনকূটনীতি, সফট পাওয়ার কীভাবে সামঞ্জস্য করা যায় বাইরের দেশগুলোতে। কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় ছিলেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে ভারতের চিঠির জন্য অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ। ভারতের কাছ চিঠির জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।