নিজস্ব প্রতিবেদক :
আর মাত্র কদিন পরেই ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সব থেকে বড় এই উৎসব উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার (৭ এপ্রিল)। ঘোষণা অনুযায়ী এবারের ঈদযাত্রা ও ফিরতি টিকিট অগ্রিম বিক্রি শুরু হয়েছে শতভাগ অনলাইনে।
এদিন সকাল ৮টায় অনলাইন টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরুর কয়েক মিনিট পর বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং ওয়েবসাইটে ঢুকতেই চোখ কপালে ওঠার উপক্রম। ঈদযাত্রায় যেসব রুটে টিকিটের চাহিদা বেশি, সেগুলোতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে সব টিকিট।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন বিক্রি হয়েছে ১৭ এপ্রিলের টিকিট। সকাল ৮টার পর ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি ও পদ্ম এক্সপ্রেস এই চারটি ট্রেনের কোনোটিতেই টিকিট নেই। একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা থেকে রংপুরগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে। ১৭ তারিখে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের চিত্রও ভিন্ন ছিল না।
তবে যেসব রুটে বরাবরই চাপ কম থাকে সেসব রুটে টিকিট মিলছে বেশ পরেও। সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটের সব ট্রেনেই টিকিট পাওয়া গেছে। ঢাকা-খুলনা রুটেও কিছু সিট খালি দেখা গেছে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ২৫ হাজার ৭৭৮টি টিকিটের বিপরীতে বিক্রির শুরুতে প্রথম মিনিটেই ১২ লাখ মানুষ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ।
সহজের সিইও সন্দ্বীপ দেবনাথ বলেন, ৮টা ১ মিনিটেই ১ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ৬ মিনিটে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার অগ্রিম টিকিট। পশ্চিমাঞ্চলের সব ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু টিকিট এখনো রয়েছে।
ওয়েবসাইটের উন্নয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে ঢুকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সহজে প্রবেশ করতে পারছে মানুষ। ফলে কয়েক সেকেন্ডেই পেয়ে যাচ্ছে টিকিট। এ কারণে টিকিট ছাড়ার কয়েক মিনিটেই টিকিট শেষ হয়েছে। যেসব রুটে চাপ বেশি সেসব রুটের ট্রেনের টিকিট শুরুতেই শেষ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি সকাল ১০টায় আরও জানিয়েছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে ১০ হাজার ৫৯৬টি টিকিট এখনো রয়েছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল বিক্রি হবে ২১ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট।
ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ১৬ এপ্রিল ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট।
রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনসমূহের ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট (১৭-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) শতভাগ শুধুমাত্র অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ক্রয় করা যাবে। টিকিট ক্রয়ের জন্য রেলওয়ে টিকিটিং ওয়েব পোর্টাল, ‘Rail Sheba’ অ্যাপ বা যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করার মাধ্যমে NID/ পাসপোর্ট/ জন্মনিবন্ধন যাচাইপূর্বক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয়— এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর হয়। মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকিট পায় না। সব মানুষ টিকিট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইনে শতভাগ টিকেট দেওয়া হবে। কমলাপুরে গিয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের যেন ঘুরতে না হয় এবং তারা যেন বাসায় বসে টিকিট কাটতে পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয় তবে সেটি আগামী ঈদে সংশোধন করা হবে।