Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

সারাদেশে বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এ কারণে রোববার সকাল থেকে শিবচরে বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। তবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের চাপই বেশি এই নৌপথে।

বোরবার সকালে সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে মানুষের ভিড়। পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যাই বেশি ফেরিতে। ঢাকা থেকে আসা এসব যাত্রীরা ভিড় করছেন ঘাটের টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে গিয়ে।

তাদের মধ্যে কেউ মাইক্রোবাস, কেউবা সিএনজি মাহিন্দ্র বা ইজিবাইক আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছেন দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। যানবাহনে যাত্রীদের গুনতেও হচ্ছে দ্বিগুনের বেশি ভাড়া।

এসব যানবাহনে যাত্রীদের গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি কোন বালাই নেই চালক কিংবা যাত্রীদরে মধ্যে।

এদিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ফেরিতে চাহিদার তুলনায় যানবাহন লোড নিতে পারছে না। ফলে উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে পড়লে ঢাকায় থাকা কষ্ট। কাম কাইজ জোটে না। বেকার বইসা থাকতে হয়। তখন এক বেলা খাওন তো আর কেউ দিবে না। তাই গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে থাকলে ঢাকার মত এত খরচা হইবে না।’

ঢাকা থেকে আসা তরিকুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘পুরো দেশ লকডাউন দিলে আমরা কি করে চলবো। এ ব্যাপারটাও সরকারের ভাবা উচিৎ। আমাদেরও তো বৌ, পোলামাইয়া আছে। ঢাকা থেকে যেখাবে বরিশালের ভাড়া ৩০০ টাকা সেখানে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা চইলা গেছে। পথে পথে দুর্ভোগ। বাস বন্ধ কইরা দিছে, কিন্তু কই মানুষের আসা কী থামাইতে পারলো সরকার। শুধু মানুষগুলাকে ভোগান্তি।’

এদিকে জীবিকার তাগিদে এখনো ঢাকায় ছুটছেন শ্রমজীবী মানুষ। একই ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আর দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঘাটে এসেছেন তাঁরাও।

খুলনা থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমি পুরান ঢাকার একটি কারখানায় কাম করি। এক সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়িতে আইসা লকডাউনে আটকা পড়ছি। বাস চলে না। বিপদে পইরা এখন ঢাকায় যাই কামে। গ্রামে বাড়িতে থাকলে তো আর কাম জোটবে না।’

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) ভজন সাহা বলেন, ‘আমাদের ১৫টি ফেরি চালু আছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় সব যাত্রী ফেরিতে পার হচ্ছে। যাত্রী বেশি থাকার কারণে ফেরিতে চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন বেশি লোড নিতে পারছি না আমরা। এ কারণে ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হচ্ছে কিন্তু তারা কেউ তা মানছে না। তারা করোনা বলে কিছুই বিশ্বাস করে না। তবুও আমরা যতটুকু বলার যাত্রীদের বুঝিয়ে বলি। এরপরেও না শুনলে আমরা কি করতে পারি?’

সকাল ১০টায় বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামালউদ্দিন বলেন, ‘যাত্রীদের খুব চাপ। ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। যাত্রীরা ঘাট থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেটে থ্রি-হুইলার ও ভাড়ার চলা মোটরসাইকেলগুলো করে গন্তব্যে যাচ্ছে। এই যানবাহনগুলো আমাদের নির্দেশনা না মেনে গ্রামের রাস্তার ফাঁকফোকর দিয়ে চলাচল করছে। এদের কোন ভাইবেই আটকানো যাচ্ছে না। এরপরেও আমাদের ট্রাফিক পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীসহ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১

সারাদেশে বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এ কারণে রোববার সকাল থেকে শিবচরে বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। তবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের চাপই বেশি এই নৌপথে।

বোরবার সকালে সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে মানুষের ভিড়। পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যাই বেশি ফেরিতে। ঢাকা থেকে আসা এসব যাত্রীরা ভিড় করছেন ঘাটের টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে গিয়ে।

তাদের মধ্যে কেউ মাইক্রোবাস, কেউবা সিএনজি মাহিন্দ্র বা ইজিবাইক আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছেন দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। যানবাহনে যাত্রীদের গুনতেও হচ্ছে দ্বিগুনের বেশি ভাড়া।

এসব যানবাহনে যাত্রীদের গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি কোন বালাই নেই চালক কিংবা যাত্রীদরে মধ্যে।

এদিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ফেরিতে চাহিদার তুলনায় যানবাহন লোড নিতে পারছে না। ফলে উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে পড়লে ঢাকায় থাকা কষ্ট। কাম কাইজ জোটে না। বেকার বইসা থাকতে হয়। তখন এক বেলা খাওন তো আর কেউ দিবে না। তাই গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে থাকলে ঢাকার মত এত খরচা হইবে না।’

ঢাকা থেকে আসা তরিকুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘পুরো দেশ লকডাউন দিলে আমরা কি করে চলবো। এ ব্যাপারটাও সরকারের ভাবা উচিৎ। আমাদেরও তো বৌ, পোলামাইয়া আছে। ঢাকা থেকে যেখাবে বরিশালের ভাড়া ৩০০ টাকা সেখানে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা চইলা গেছে। পথে পথে দুর্ভোগ। বাস বন্ধ কইরা দিছে, কিন্তু কই মানুষের আসা কী থামাইতে পারলো সরকার। শুধু মানুষগুলাকে ভোগান্তি।’

এদিকে জীবিকার তাগিদে এখনো ঢাকায় ছুটছেন শ্রমজীবী মানুষ। একই ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আর দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঘাটে এসেছেন তাঁরাও।

খুলনা থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমি পুরান ঢাকার একটি কারখানায় কাম করি। এক সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়িতে আইসা লকডাউনে আটকা পড়ছি। বাস চলে না। বিপদে পইরা এখন ঢাকায় যাই কামে। গ্রামে বাড়িতে থাকলে তো আর কাম জোটবে না।’

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) ভজন সাহা বলেন, ‘আমাদের ১৫টি ফেরি চালু আছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় সব যাত্রী ফেরিতে পার হচ্ছে। যাত্রী বেশি থাকার কারণে ফেরিতে চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন বেশি লোড নিতে পারছি না আমরা। এ কারণে ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হচ্ছে কিন্তু তারা কেউ তা মানছে না। তারা করোনা বলে কিছুই বিশ্বাস করে না। তবুও আমরা যতটুকু বলার যাত্রীদের বুঝিয়ে বলি। এরপরেও না শুনলে আমরা কি করতে পারি?’

সকাল ১০টায় বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামালউদ্দিন বলেন, ‘যাত্রীদের খুব চাপ। ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। যাত্রীরা ঘাট থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেটে থ্রি-হুইলার ও ভাড়ার চলা মোটরসাইকেলগুলো করে গন্তব্যে যাচ্ছে। এই যানবাহনগুলো আমাদের নির্দেশনা না মেনে গ্রামের রাস্তার ফাঁকফোকর দিয়ে চলাচল করছে। এদের কোন ভাইবেই আটকানো যাচ্ছে না। এরপরেও আমাদের ট্রাফিক পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীসহ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’