Dhaka সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের এভাবে পেটানো সভ্য রাষ্ট্রে হতে পারে না : হাসনাত আব্দুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শিক্ষকদের রাস্তায় যেভাবে পেটানো হয়েছে এটা কোনও সভ্য রাষ্ট্রে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাস্তায় ফেলে শিক্ষককে মারবেন, এভাবে শিক্ষক পেটানো তো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। এ কাজ কোনো সভ্য সরকারও করতে পারে না। অনতিবলম্বে এ হীন কাজের জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যাদের গ্রেফতার করেছেন, তাদেরকে সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষকরা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নাগরিকদের মতো জীবনযাপন করেন। অথচ তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি যে, তারা প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করে রাষ্ট্রকে উপহার দেবেন। শিক্ষকরা সমাজে আদর্শ মানুষ। তাদের উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়। তাদের সততা নিয়ে গল্প করা হয়। অথচ মাস শেষে তাদের বেতন দেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা বাজার করতে বের হয়ে মাথা নিচু করে বাড়ি ফেরেন। কখনো বুক ফুলিয়ে বাজারে গিয়ে একটা বড় মাছ কিনতে পারেন না। শুনেছি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যখন চাকরি শুরু করেন, তখন মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন পান। আমার পরিচিত একজন শিক্ষক আছেন, ৩২ বছর চাকরির পর আজ উনার বেতন হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ২৮০০ টাকা। ৩২ বছর চাকরির পর তাকে বেতনের ১৫ শতাংশ টাকা দিয়ে মাত্র এক কেজি ইলিশ মাছ কিনতে হয়। ৩০ বছর চাকরি করে তার যে বেতন, তার ওপর ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হলেও তা দিয়ে বাড়িভাড়া পাওয়া যায় না।

হাসনাত বলেন, একজন শিক্ষকের চাকরি শুরুর বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা; যার ২০ শতাংশ আসে মাত্র ২৫০০ টাকা। ঢাকাসহ দেশের কোনো শহরে, কোথাও ২৫০০ টাকা দিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে দেখান। মফস্বলেও কোথাও ২৫০০ টাকা বাসাভাড়া পাওয়া যায় না। আপনি শিক্ষককে ভালো বেতন দেবেন না, বাড়িভাড়া ভাতা দেবেন না- অর্থ ছাড়া শুধু তাদের মুখের কথায় সম্মান দেবেন। টাকা ছাড়া এ সম্মান অসম্মানের চেয়েও বেশি অপমানিত করা। তাই অবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এনসিপির এ নেতা।

হাসনাত বলেন, বিদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে শিক্ষা খাত। আর বাংলাদেশে সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যদি কিছু থাকে তাহলে তা শিক্ষকদের দেয়া হয়। শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনা আশা করাকে রাষ্ট্রীয় প্রহসন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এনসিপির এই নেতা বলেন, আমি যদি শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক না করি তাহলে কীভাবে প্রত্যাশা করি তারা প্রথম শ্রেণীর নাগরিক গড়ে তুলবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল তারা পুরুনো পথে হাঁটবে না বরং তারা হবে শিক্ষাবান্ধব সরকার। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হয়েছেন প্রমোশন বান্ধব সরকার। এই সরকারের প্রধান কাজ হলো পোস্টিং দেয়া। হাসিনার আমলে যারা রাস্তায় এসে তার পক্ষে স্লোগান দিয়েছিল অর্থের বিনিময়ে তাদের পদায়ন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তায় শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে এটি কোনও সভ্য রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই হীন কাজের জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যাদের গ্রেফতার করেছেন তাদের সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যখন অসুস্থ হয় তখন তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গেলেন, অথচ তার উচিত ছিল দেশের মানুষ যেখানে চিকিৎসা নেয় সেখানে চিকিৎসা নেয়া। নির্লজ্জের মতো তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত।

শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শিক্ষকদের এভাবে পেটানো সভ্য রাষ্ট্রে হতে পারে না : হাসনাত আব্দুল্লাহ

প্রকাশের সময় : ০৭:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শিক্ষকদের রাস্তায় যেভাবে পেটানো হয়েছে এটা কোনও সভ্য রাষ্ট্রে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাস্তায় ফেলে শিক্ষককে মারবেন, এভাবে শিক্ষক পেটানো তো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। এ কাজ কোনো সভ্য সরকারও করতে পারে না। অনতিবলম্বে এ হীন কাজের জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যাদের গ্রেফতার করেছেন, তাদেরকে সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষকরা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নাগরিকদের মতো জীবনযাপন করেন। অথচ তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি যে, তারা প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করে রাষ্ট্রকে উপহার দেবেন। শিক্ষকরা সমাজে আদর্শ মানুষ। তাদের উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়। তাদের সততা নিয়ে গল্প করা হয়। অথচ মাস শেষে তাদের বেতন দেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা বাজার করতে বের হয়ে মাথা নিচু করে বাড়ি ফেরেন। কখনো বুক ফুলিয়ে বাজারে গিয়ে একটা বড় মাছ কিনতে পারেন না। শুনেছি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যখন চাকরি শুরু করেন, তখন মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন পান। আমার পরিচিত একজন শিক্ষক আছেন, ৩২ বছর চাকরির পর আজ উনার বেতন হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ২৮০০ টাকা। ৩২ বছর চাকরির পর তাকে বেতনের ১৫ শতাংশ টাকা দিয়ে মাত্র এক কেজি ইলিশ মাছ কিনতে হয়। ৩০ বছর চাকরি করে তার যে বেতন, তার ওপর ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হলেও তা দিয়ে বাড়িভাড়া পাওয়া যায় না।

হাসনাত বলেন, একজন শিক্ষকের চাকরি শুরুর বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা; যার ২০ শতাংশ আসে মাত্র ২৫০০ টাকা। ঢাকাসহ দেশের কোনো শহরে, কোথাও ২৫০০ টাকা দিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে দেখান। মফস্বলেও কোথাও ২৫০০ টাকা বাসাভাড়া পাওয়া যায় না। আপনি শিক্ষককে ভালো বেতন দেবেন না, বাড়িভাড়া ভাতা দেবেন না- অর্থ ছাড়া শুধু তাদের মুখের কথায় সম্মান দেবেন। টাকা ছাড়া এ সম্মান অসম্মানের চেয়েও বেশি অপমানিত করা। তাই অবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এনসিপির এ নেতা।

হাসনাত বলেন, বিদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে শিক্ষা খাত। আর বাংলাদেশে সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যদি কিছু থাকে তাহলে তা শিক্ষকদের দেয়া হয়। শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনা আশা করাকে রাষ্ট্রীয় প্রহসন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এনসিপির এই নেতা বলেন, আমি যদি শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক না করি তাহলে কীভাবে প্রত্যাশা করি তারা প্রথম শ্রেণীর নাগরিক গড়ে তুলবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল তারা পুরুনো পথে হাঁটবে না বরং তারা হবে শিক্ষাবান্ধব সরকার। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হয়েছেন প্রমোশন বান্ধব সরকার। এই সরকারের প্রধান কাজ হলো পোস্টিং দেয়া। হাসিনার আমলে যারা রাস্তায় এসে তার পক্ষে স্লোগান দিয়েছিল অর্থের বিনিময়ে তাদের পদায়ন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তায় শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে এটি কোনও সভ্য রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই হীন কাজের জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যাদের গ্রেফতার করেছেন তাদের সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যখন অসুস্থ হয় তখন তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গেলেন, অথচ তার উচিত ছিল দেশের মানুষ যেখানে চিকিৎসা নেয় সেখানে চিকিৎসা নেয়া। নির্লজ্জের মতো তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত।

শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।